মহামায়া লেক ও সেচ প্রকল্প - চট্টগ্রাম-Mahamaya Chhara Irrigation Extension Project
চট্টগ্রামে অবস্থিত মহামায়া লেক বা হ্রদ বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদগুলোর একটি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে কৃষিকাজের সেচ প্রকল্প হিসেবে এই লেকটি তৈরি করা হয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসার জন্য আদর্শ একটি স্থান মহামায়া লেক।
পাহাড়-গুহা-ঝর্নার সম্মিলনে অপূর্ব সৌন্দর্যে ঘেরা এই লেকটি আপনার ভালো লাগবেই। লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লেকের পাশেই ক্যাম্পিং করতে পারেন। প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই ইকোপার্ক ।
অবস্থান
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দেড়/দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান।
মহামায়া হ্রদ সেচ প্ৰকল্প
এই এলাকার জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢল নিরসন এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষিখাতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড মহামায়া সেচ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে উক্ত মহামায়া খালের ওপর স্লুইস গেট স্থাপন করে। তৎকালীন সড়ক ও জনপথের মহাসড়কের অধিগ্রহণের অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণ অংশে স্লুইস গেট অপারেটিংয়ের জন্য সেখানে সড়ক নির্মাণ করে পাউবো। তখনকার সময়ে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মিরসরাই উন্নয়ন সংসদ নামের স্থানীয় সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন সড়কের দু’পাশে শতাধিক গাছ রোপণ করে। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামায়া সেচ প্রকল্প উদ্ভোধন করেন। উদ্বোধনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং মৎস্য বিভাগ পর্যায়ক্রমে এই হ্রদ প্রায় ৩০ টন পোনা অবমুক্ত করে।
কায়াকিং ও নৌভ্রমণ
কায়াকিং-এর জন্য ঘন্টা প্রতি খরচ হবে ৩০০ টাকা। ছাত্রদের জন্য এই খরচ ২০০ টাকা। তবে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখাতে হবে। এক কায়াকে চড়া যাবে ২ জন।
সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কায়াকিং করা যায়। কায়াকে ওঠা সবার জন্য লাইফ জ্যাকেট থাকে, তাই যারা সাঁতার পারেন না তারাও কায়াকিং করতে পারবেন।
এছাড়া মহামায়া লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ইঞ্জিনচালিত বোট আছে। মাঝারি মাপের ইঞ্জিনচালিত বোটে ঘন্টা প্রতি ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা। একসাথে ৮-১০ জন উঠতে পারবেন এই বোটে। আর বড় বোটে ঘন্টা প্রতি ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এসব বোটে একসাথে ১৫-২০ জন উঠতে পারবেন।
টিকেট মূল্য
মহামায়া লেকে প্রবেশের জন্য প্রতিজন ২০ টাকা দিয়ে টিকেট করতে হবে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যেতে হলে কমলাপুর, আরামবাগ বা সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে টিকিট কাটুন। নামতে পারেন বারইয়ারহাট, মিরসরাই বা বড়তাকিয়া স্টেশনে। অবশ্যই বাসের ড্রাইভার এবং গাইডকে আগেই বলে রাখবেন। এবং অব্যশই ফেনী পার হওয়ার পর প্রস্তুতি রাখবেন। বারইয়ারহাট, মিরসরাই বা বড়তাকিয়া যেখানেই নামেন না কেন সিএনজি অটোরিকশা বা অন্য কোনো বাহনে ঠাকুরদীঘি বাজারে এসে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে মহামায়ায় প্রবেশ করতে হবে। নিজস্ব যানবাহন নিলে একেবারেই মহামায়ার গেটে নামতে পারবেন। গাড়ি ভেদে নির্ধারিত ফি দিয়ে টিকিট কেটে নিশ্চিন্তে ঢুকে যাবেন ভেতরে।
চট্টগ্রাম থেকে আসতে চাইলে বারইয়ারহাট বা ফেনীগামী যেকোনো বাসে উঠলেই হবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মিরসরাই বা বড়তাকিয়া স্টেশনে নেমে যেতে হবে।
ভাড়া পড়বে বাস ভেদে ৪৫০-১৫০০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় চলে সরাসরি চলে যেতে পারবেন মহামায়া লেকে। ভাড়া নেবে ২০-৩০ টাকা। এছাড়াও আপনি রেল ও আকাশপথেও যেতে পারবেন চট্টগ্রামে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী
ট্রেনে আসলে ফেনী রেলওয়ে স্টেশন নামতে পারেন। তারপর স্টেশন থেকে ইজিবাইকে করে মহিপাল বাসস্ট্যান্ড তারপর চট্টগ্রামগামী যেকোন বাসে ঠাকুরদীঘি বাজার আসতে ভাড়া-৩০/৪০ টাকা।
মহামায়া লেকে তাঁবুতে থাকতে পারেন। তবে মহামায়াতে ক্যাম্পিং এ মেয়েদের থাকার অনুমতি নেই, কেবলমাত্র ছেলেরা থাকতে পারবে। এছাড়া মিরসরাই এ থাকার মত তেমন ভালো কোন আবাসিক হোটেল নেই। থাকতে চাইলে মিরসরাই এর কাছে সীতাকুণ্ডে কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে সেখানে থাকতে পারবেন। হোটেল সৌদিয়ায় ৬০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাবেন এবং সাইমুন ও অন্য আবাসিক হোটেলে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় থাকতে পারবেন।
হোটেল সৌদিয়ায় বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন 01991-787979, 01816-518119 নাম্বারে।
তবে আরও ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনাকে চট্রগ্রাম শহরে চলে যাওয়াই উত্তম। মিরসরাই থেকে চট্রগ্রাম যেতে ১ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মত লাগবে। অংলকার মোড়ে মোটামুটি মানের থাকার মত হোটেল পাবেন। অথবা চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এর স্টেশন রোড এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল আছে, পছন্দমতোো কোন এক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারেন।
নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলো-
১. হোটেল প্যা রামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম। ভাড়াঃনন-এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা ।
যোগাযোগ : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪।
২. হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম। ভাড়া : নন এসি : ১০০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল। এসি : ১৭২৫ টাকা ।
যোগাযোগ: ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫।
৩. হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম। একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল । ভাড়া : ৭০০ টাকা থেকে শুরু । এসি ১৩০০ টাকা ।
যোগাযোগ: ০৩১-০৬১৪০।
৪. হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ । ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা ।
যোগাযোগঃ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২
৫. হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। ভাড়া-২৩০০/৩৪০০ টাকা যোগাযোগ: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭।