
ভাওয়াল রাজবাড়ী, গাজীপুর-Bhawal Rajbari, Gazipur
ভাওয়াল রাজবাড়ী অবিভক্ত ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশের ভাওয়াল রাজ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত একটি রাজবাড়ী। বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন জমিদার লোকনারায়ণ রায়; কিন্তু এর কাজ শেষ করেন রাজা কালীনারায়ণ রায়। ভবনটির দক্ষিণ পাশে মূল ফটক বা প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বারটি বর্গাকার এবং এর চার কোণে চারটি স্তম্ভ তৈরি করে ওপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশপথের কাঠামোর একদিকের দৈর্ঘ্য ২০ মিটার এবং প্রবেশদ্বারের পরে একটি প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে। এর পর রয়েছে হলঘর। হলঘরের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে তিনটি করে মোট ছয়টি বসার কক্ষ। ভবনের ওপরের তলায় ওঠার জন্য আছে শালকাঠের তৈরি প্রশস্ত সিঁড়ি। ভবনের উত্তর প্রান্তে খোলা জায়গায় নাটমন্দির।
এই রাজবাড়ীর আওতায় ভাওয়াল এস্টেট প্রায় ৫৭৯ বর্গমাইল (১,৫০০ কিমি২) এলাকা জুড়ে ছিল যেখানে প্রায় ৫ লাখ প্রজা বাস করতো। ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায় ও আরো দুই ভাই মিলে এই জমিদারীর দেখাশোনা করতেন। ১৯৫০-এর পূর্ববঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে এটি বিলুপ্ত করা হয়।
ভাওয়াল রাজার ইতিহাস
এই রাজবাড়ীর সাথে জড়িয়ে আছে ভাওয়াল রাজা সন্ন্যাসী রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যু ও ১২ বছর পরে আবির্ভাবের কাহিনী। মৃত্যুর পর এক রাজার জীবিত হয়ে ফিরে আসার কাহিনী নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাওয়াল গড়ের সুউচ্চ এই প্রাসাদ। সেই রাজা হলেন রমেন্দ্র নারায়ণ। যিনি ছিলেন ভাওয়াল রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণের দ্বিতীয় সন্তান। ১৯০১ সালে রাজেন্দ্র নারায়ণ, পরে তার দুইভাই ও ১৯০৭ সালে মা- রানী বিলাসমনীর মৃত্যুর পর রাজা হন রমেন্দ্র নারায়ণ। একই বছর বিভাবতীকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯০৯ সালে অসুস্থ হয়ে দার্জিলিংয়ে মারা যান রাজা রমেন্দ্র। তাকে শ্মশানে নেয়ার পর হঠাৎ ঝড় উঠলে রানী বিভাবতী-সহ সবাই মৃতদেহ সৎকার না করে চলে যায়। তখনই প্রশ্ন উঠে বিভাবতীর পতিসেবা নিয়ে। এখানেই ঘটনার শেষ নয়, মৃত্যুর ১২ বছর পর সন্ন্যাসী বেসে রাজা রমেন্দ্র নারায়ণ রায় ফিরে আসেন জয়দেবপুরে। আদালতেও প্রমাণ হয় তিনিই সেই রাজা রমেন্দ্র। কিন্তু রায়ের মাত্র ৩দিন পরেই মারা যান তিনি। আর এর মধ্য দিয়েই বিলুপ্তি ঘটে ভাওয়াল রাজ বংশের।
যেভাবে যাবেন
দেশের যে কোনো স্থান থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে শিববাড়ী মোড়। ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে জমিদারবাড়ী যেতে হয়। রাজবাড়ীতে ভ্রমণের জন্য নিজের কিংবা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ডান দিকের রাস্তাটি গেছে জয়দেবপুর সদর বরাবর। জয়দেবপুর সদর রেল ক্রসিং পার হয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই রানী বিলাসমণি স্কুল। এ স্কুলের ঠিক বিপরীত পাশেই ভাওয়াল রাজবাড়ীটি অবস্থিত।