সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা-Sangrampunji Jharna
সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত একটি জলপ্রপাত। সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ১ কি.মি. পশ্চিমে অবস্থিত সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত। এখানে পাহাড়, জলপ্রপাত এবং নদীর সম্মিলন স্থানটিকে পর্যটকদের নিকট আকর্ষনীয় করে তুলেছে।
জলপ্রপাতটি বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তি পর্যটন এলাকা জাফলংয়ে অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চলের পাহাড়সারি।
জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জী। আদমশুমারী অনুযায়ী জাফলং-এ ১,৯৫৩ জন খাসিয়া উপজাতি বাস করেন। জলপ্রপাতটি সংগ্রামপুঞ্জিতে অবস্থিত বলে এটি সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত নামে সমধিক পরিচিত।
কখন যাবেন
সাধারণত বর্ষাকালে বাংলাদেশের সকল ঝর্ণাতে বেশি পানির দেখা মিলে, তাই বর্ষাকালই সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখার উপযুক্ত সময়। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে এই ঝর্ণায় অনেক পানি থাকে, তবে শীত আসার সাথে সাথে পানি কমতে শুরু করে। অর্থাৎ মায়াবী ঝর্ণা দেখতে যাবার ভাল সময় হল বর্ষাকাল ও পরবর্তী কয়েক মাস।
কিভাবে যাবেন
সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা যেতে হলে প্রথমে আসতে হবে চায়ের দেশ সিলেটে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সিলেট আসা যায়। বাস, ট্রেন কিংবা আকাশ পথে যে কোন উপায়েই সিলেট আসতে পারবেন।
ঢাকা থেকে সিলেট বাসে
ঢাকা থেকে সিলেটগামী যে কোন বাসে সিলেট আসা যাবে।ঢাকা থেকে সিলেট এর দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার, ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালি ও আবদুল্লাপুর বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাস ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে।এগুলোর ভাড়া সাধারণত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস জনপ্রতি ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় পাবেন। সকাল, দপুর কিংবা রাত সব সময়ই বাস ছেড়ে যায়।সিলেট পৌঁছাতে সাধারণত সময় লাগে ৬ ঘন্টার মত।
ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উঠতে পারেন।বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উঠতে হলে কমলাপুর থেকে যে ট্রেন গুলি ছেড়ে যায় তার সাথে ২০ মিনিট সময় যোগ করে নিবেন।কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ০৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস।শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া পরবে ৩০০ থেকে ১২০০ টাকা।যে কোন ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৭-৮ ঘন্টা।
ঢাকা থেকে বিমানে সিলেট
ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ক্লাস অনুযায়ী ভাড়া সাধারণত ২৭০০-৯,০০০ টাকা এর মধ্যে হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম থেকে বাসে সিলেট
চট্রগ্রাম থেকে গ্রীন লাইন, এনা, সৌদিয়া সহ অন্যান্য আরও অনেক বাস সিলেট যায়। এসি ও নন এসি এসব বাসের ভাড়া ৭০০-২০০০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট
সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে যায় উদয়ন এক্সপ্রেস।শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস।পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে।যে কোন ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে।
সিলেট থেকে জাফলং:
সিলেট থেকে প্রায় সকল প্রকার যানবাহনের মাদ্ধমে জাফলং যাওয়া যায়। লোকাল বাসে যেতে আপনাকে শহরের কদম তলী বাস টার্মিনাল বা শিবগঞ্জ বাস টার্মিনাল যেতে হবে।কদম তলী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ১৫ মিনিট পর পর বাস ছাড়ে।সেখান থেকে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৭০-৮০ টাকা। রিসেন্টলি গেইটলক সার্ভিস চালু হয়েছে ভাড়া ১৩০ টাকা। ভাড়া বেশী নিলেও আপনার অর্ধেক সময় বাচিয়ে দেবে।এছাড়াও নগরীর সোবহানী ঘাট নামক জায়গা থেকেও বাস পাবেন।
এছাড়াও সিএনজি,মাইক্রো বা ক্যারীক্যাব পাবেন।সিএনজি বা অটোরিকশায় ১২০০ থেকে ২০০০ টাকায় জাফলং যেতে পারবেন। মাইক্রোবাসে যাওয়া-আসার জন্য রিজার্ভ নিলে সারাদিনের জন্যে ভাড়া লাগবে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা।আর ক্যারীক্যাবে ২০০০ থেকে ২৫০০ দিলে সারাদিন নিয়ে ঘুরতে পারবেন। দলগত ভাবে গেলে মাইক্রোবাস, সিএনজি বা ক্যারীক্যাব রিজার্ভ করে গেলেই ভালো, তাহলে আশেপাশের অন্যান্য জায়গা নেমে ঘুরে দেখতে পারবেন। ঠিক করার আগে ভাল মত দরদাম ও কি কি দেখতে চান তা ভালো করে কথা বলে নিবেন।
জাফলং থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা
জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে মায়াবী ঝর্ণায় যেতে নৌকা দিয়ে নদী পাড় হয়ে ১০ মিনিট পায়ে হেঁটে যেতে হবে। বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে ঝর্ণার বেশ কাছে যাওয়া যায়। নৌকায় নদী পাড় হতে শীতকালে জনপ্রতি ১০-২০ টাকা লাগবে। বর্ষায় ঝর্ণার কাছে যেতে জনপ্রতি নৌকা ভাড়া লাগবে ৩০-৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
তামাবিল/জৈন্তাপুর এর দিকে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। তামাবিলে জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট নামে একটি ভাল মানের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া জাফলংয়ের গেস্ট হাউজ ও জেলা পরিষদের বাংলোতে আগেই বুকিং দিয়ে থাকতে পারবেন। এছাড়া সিলেটের লালাবাজার ও দরগা রোডে কম খরচে থাকার বেশকিছু মানসম্মত রেস্ট হাউস রয়েছে ৷ তাই সাধারণত পর্যটকরা সিলেট জেলা শহরেই ফিরে আসেন। যেখানে সিঙ্গেল রুম ৪০০টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা (নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকা যাবে।
কোথায় খাবেন
স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা)। এছাড়াও স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু এবং কাঠালের দারুণ সুখ্যাতি রয়েছে। আরও রয়েছে চা-পাতা। এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এবং খামার ভিত্তিক হাঁস পালন করা হয়। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এখানে কিছু উন্নতমানের হোটেল রয়েছেঃ মামার হোটেল; হোটেল শাহজালাল; পর্যটন রেস্তোরা, জাফলং – তামাবিল জিরো পয়েন্ট, পিকনিক সেন্টার রেস্টুরেন্ট – বল্লাঘাট, জাফলং, ক্ষুধা রেস্টুরেন্ট – বল্লাঘাট, জাফলং।
তবে, পর্যটকেরা সচরাচর সিলেট শহরে এসে খাওয়া-দাওয়া করে থাকে জিন্দাবাজারের জল্লারপাড় রোডে অবস্থিত পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টে সুলভ মূল্যে পছন্দ মত দেশী খাবার খেতে পারেন। এছাড়াও এই রেস্টুরেন্ট গুলোতে নানা রকম দেশী খাবার ও ভর্তা ভাজি পাওয়া যায়।এইসব রেস্টুরেন্টের বাহারী খাবার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, পছন্দ মত যে কোন জায়গায় খেয়ে নেওয়া যাবে।