জৈন্তা হিল রিসোর্ট-Jainta Hill Resort
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলাধীন ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের আলু বাগান নামক স্থানে জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট অবস্থিত। এখানে মনোরম পরিবেশে পাহাড়ের জলপ্রপাত দেখার জন্য হাজারো পর্যটক এখানে আসেন। থাকা খাওয়ার পাশাপশি এখান খেকেই পাহাড়ের সৌন্দর্য্য অবলোকন করা যায়।
পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশ ছোঁয়া খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়গুলো এ সময়ে সবুজে ভরে ওঠে। পাহাড়ের গায়ের ঝরনাগুলোও কেবল প্রাণ ফিরে পায় এই বর্ষাতেই।
সিলেট থেকে জাফলং যেতে প্রথমেই দেখে নিতে পারেন জৈন্তা রাজবাড়ি। শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে এ রাজবাড়ির অবস্থান। তবে বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেলেও সিলেট তামাবিল মহাসড়কের মাঝখানে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জৈন্তা রাজাদের পান্থশালা। সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়কে যেতে দরবস্ত বাজার ছেড়ে সামনে সারিঘাট। সেখান থেকে সামান্য সামনেই জৈন্তা রাজবাড়ি।
জৈন্তা রাজবাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার সামনে জৈন্তা হিল রিসোর্ট। জাফলংয়ের পাঁচ কিলোমিটার আগে নলজুড়ি এলাকায় বিশাল টিলার উপরে গড়ে তোলা হয়েছে পাহাড়ি এ অবকাশ কেন্দ্র। পাশেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। ওখানকার পাহাড়ের সৌন্দর্য এখান থেকে উপভোগ করা যায় ভালোভাবেই। এছাড়া পাহাড়মুখী বেশ কয়েকটি কটেজও আছে এ অবকাশ কেন্দ্রে। জৈন্তা রিসোর্ট থেকে উপভোগ করা যায় মেঘালয় পাহাড়ি ঝরনার সৌন্দর্য।
জৈন্তা রিসোর্ট থেকে এক কিলোমিটার সামনে তামাবিল স্থল বন্দর। এখান থেকে মূলত কয়লা আমদানী হয় বাংলাদেশে। তামাবিল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সামনে জাফলং। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার।
ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের কোলে মনোরম পর্যটন কেন্দ্র এটি। এ জায়গা থেকে মানুষের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। স্বচ্ছ পানির নিচ থেকে ঝুড়ি ভরে এখানে পাথর তুলে আনেন শ্রমিকরা।
খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে স্বচ্ছ পানির নদী পিয়াইন। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে এ নদী মিশেছে সুরমার সঙ্গে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিচ্ছেদ রচনাও করেছে এ নদী। ইচ্ছে হলে পিয়াইন নদীতে নৌ ভ্রমণও করতে পারবেন।
এখানে পাথর শ্রমিকদের খোলা নৌকায় ঘুরে বেড়ানো যায় পাথর তোলার ফাঁকে এরকম অনেক নৌকাই পর্যটকদের ঘুড়িয়ে থাকে। ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা ঘন্টায় ১শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য বিশেষ কিছু ইঞ্জিন নৌকাও আছে। এগুলোর ভাড়া ঘন্টা প্রতি ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
জাফলংয়ের ওপারেই দেখা যায় ভারতের ডাউকি বন্দর। ডাউকি থেকে শিলং খুবই কাছে। মাত্র ৪০ কিলোমিটার। ডাউকি বন্দরের পাশেই রয়েছে উঁচু দুই পাহাড়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ডাউকি ঝুলন্ত সেতু।
কয়েক বছর আগে পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ব্রিজটি আরও পেছনে নিয়ে যাওয়ায় জাফলংয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের সঙ্গে ঝুলন্ত ব্রিজের আগেকার দৃশ্য এখন ভালোভাবে দেখা যায় না। তবে নদী পেরিয়ে সামনে গেলে ব্রিজ আর ডাউকি বন্দর দেখা যায় ভালোভাবে।
কিভাবে যাবন
ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে সিলেট। সিলেট থেকে ১ ঘণ্টার পথ জৈন্তাপুর। বাস, মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা মাইক্রোবাসে চড়ে জৈন্তাপুর চলে যেতে পারেন। উঠতে পারেন জৈন্তা হিল রিসোর্টে অথবা কাছের নলজুড়িতে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয়। আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যেতে হবে ডাকবাংলোয়। শহর থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে গেলে ভাড়া নিবে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা
ঢাকা থেকে বাসে
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১১শ’ টাকা।
এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।
ঢাকা থেকে ট্রেনে
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ ১ হাজার ১শ’ ৯১ টাকা।
ঢাকা থেকে বিমানে
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন উড়াল দেয় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে
খাবার
জৈন্তা হিল রিসোর্টে প্রায় সকল ধরনের বাংলা খাবার পাওয়া যায়।
জৈন্তা হিল রিসোর্টের সুযোগ-সুবিধাসমূহ
* সার্বক্ষনিক টেলিফোনের ব্যবস্থা
* ২৪ ঘন্টা রুম সার্ভিস
* সার্বক্ষনিক সিকিউরিটির ব্যবস্থা(CCTV)
* সুপরিসর রেস্টুরেন্ট
* বিদ্যুৎ ব্যবস্থা
* কার পার্কিং
* নামাজের ব্যবস্থা
* রেন্ট এ কার
* ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে
কোথায় থাকবেন
জাফলংয়ের এর কাছাকাছি থাকার জন্য ভালো যায়গা জৈন্তা হিল রিসোর্ট। এখানে ২ হাজার ৩শ’ থেকে ৪ হাজার ২৫ টাকায় কক্ষ আছে। যোগাযোগ ০১১৯৩২১৮৯৯৯।
এছাড়া সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে সিলেটেও থাকতে পারেন। সিলেট শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)।
জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)।
ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৮২৬৩)।
লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)।
আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)।
দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)।
হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)।
জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)।
তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।
এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে।
যোগাযোগ
আলু বাগান, জৈন্তাপুর,
জাফলং রোড, সিলেট – ৩১৫৬
মোবাইল: 01711-324173
ওয়েব সাইট: www.jaintahill.com