মারায়ং তং ভ্রমণ গাইড ও ক্যাম্পিং -Marayong Thong Travel Guide & Camping
মারায়ন তং বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলীকদম থানায় অবস্থিত একটি পাহাড় ও পর্যটন আকর্ষণ স্থল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় ১৬৪০-১৬৬০ফুট। এই পাহাড় আরও কয়েকটি নামে পরিচিত যেমন- মারায়ান তং, মারায়ং তং, মেরাই থং জাদি, মারাইং ডং ইত্যাদি।
মারায়ন তং পাহাড়টি বান্দরবানের আলীকদম থানার মিরিঞ্জা রেঞ্জে অবস্থিত একটি পাহাড়। এটির পূর্বপাশে রয়েছে চিম্বুক রেঞ্জ এবং মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। পাহাড়টি মূলত ক্যাম্পিং করার সাইট হিসেবে পর্যটকদের নিকট জনপ্রিয়।
ভালোবাসার, ভালোলাগার প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে সমৃদ্ধি জায়গার নাম হলো মারায়নতং জাদি। মূলত শীতকাল হলো মারায়নতং জাদিতে ক্যাম্পিং করার উপযুক্ত সময়। মারায়ন তং-এর সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে গেলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাহড়ি পথ পাড়ি দিতে হয়। পাহাড়টির চূড়ায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির, যেখানে বুদ্ধের একটি মূর্তি রয়েছে।
খাড়া পথ বেয়ে পাহাড়টি উঠতে হলেও এর উপরের অংশ সমতল। এর নিচে সাপের মতো এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। কান পাতলে শোনা যেতে পারে বঙ্গোপসাগরের গর্জন। এখান থেকে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সেসবের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয় জুমঘর। এতে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এদের মধ্যে ত্রিপুরা, মারমা ও মুরং অন্যতম।
মারায়ন তং জাদির ঠিক নিচেই মারমাদের বসবাস। তারা বেশ সাহস নিয়ে থাকে সেখানে। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক করবে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে আটকে থাকা মুরংদের ঘরগুলো। মাটি থেকে সামান্য ওপরে এদের টংঘর। এসব ঘরের নিচে থাকে বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন-গরু, ছাগল, শূকর ও মুরগি। কখনো গবাদি পশুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠও রাখা হয় স্তূপ করে।
এখানকার দিনের বেশিরভাগ সময়ই অলস কাটে। তাঁবু বা খোলা জায়গায় বসে বা শুয়ে মেঘের আনাগোনা দেখে, নয়তো বই পড়েই সময় পার করে দেওয়া যায়। হঠাৎ এক টুকরো মেঘ অথবা বৃষ্টি এসে বড়জোর ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। এভাবেই বদলে যায় দৃশ্যপট। রোজ সকাল আর বিকেলের দিকে আদিবাসী ঘর থেকে ভেসে আসে সুমধুর গান। তাদের নিজস্ব ভাষা ও সুরের।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে আলীকদম সরাসরি বাস যায়। বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন রকম বাস রয়েছে। ভাড়া ৮৫০ টাকা থেকে শুরু। রাত ৮-১০টার মধ্যে বাসগুলো ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়, পৌঁছায় সকালে। আপনাকে নামতে হবে আলীকদমের আবাসিক রাস্তার মাথায়। এখান থেকেই যাত্রা শুরু।
মারায়ন পাহাড়ের চূড়া- আলীকদম বাস স্ট্যান্ড থেকে ১৫ মিনিট অটোতে গিয়ে দুই ঘণ্টার মতো পাহাড়ে উঠতে হবে, সমতল জায়গা খুব কম, বৃষ্টি হলে পথ বেশ পিচ্ছিল। দুপুর ৩টার মধ্যেই রওনা হওয়া উচিত, তা না হলে সূর্যাস্ত মিস হয়ে যাবে। পূর্ণিমার রাতে বেশি ভালো লাগবে।
মারায়ন তং পাহাড়ে মূলত সবাই যায় ক্যাম্পিং করার জন্য। কাজেই সেটি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করাই ভালো। তবে আপনার যদি আলীকদমে থাকার প্রয়োজন হয়ে তাহলে উপজেলা রোডের ‘দ্যা দামতুয়া ইন হোটেল’ অথবা ‘জেলা পরিষদের ডাক বাংলো’তে থাকতে পারবেন। এছাড়া পান বাজারে সাধারণ মানের একটি বোর্ডিং আছে।
খরচ: ১০ জনের টিম হলে সুন্দর ভাবেই ৩০০০ হাজারে হয়ে যাবে।
প্রয়োজনীয় জিনিস :
১। মায়ারনতং পাহাড়ে ভ্রমনের সময় সাথে প্রচুর পরিমান পানি ,গ্লকোজ,স্যালাইন ,শুকনো খাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সংগে নিবেন।
২। নিজেরা রান্না করতে চাইলে প্রয়োজনীয় উপকরন সঙ্গে নিবেন।তবে শুকনো কাঠের অভাব হবে না।
৩। রাতে ক্যাম্পিং করতে চাইলে তাবু,স্লিপিং ব্যাগ ও সাথে চাদর নেবেন সাথে।
৪। আশেপাশে অনুমতি ছাড়া ফল ফুল ছিড়বেন না।খুব বেশী দরকার হলে কিনে নেবেন।
৫। পাহাড়িদের সাথে ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি নেবেন।
৬। পাহাড়ে রান্নাবান্না করলে অবশ্যই সাবধানে করবেন।না হলে আগুন ছড়ায় যেতে পারে।
৭। চিপস ,বিস্কুট, ড্রাই ফুড এর প্যাকেট সব সময় নিজের কাছে রাখবেন। যেখানে সেখানে ফেলবেন না।