সীতাকুণ্ডের ঝর্ণাসমূহ - Sitakunda Waterfalls
Sitakunda Waterfalls in Chittagong

সীতাকুণ্ডের ঝর্ণাসমূহ - Sitakunda springs

বাংলাদেশে মনোমুগ্ধকর অনেক ঝর্ণা রয়েছে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে কল কল, ঝর ঝর শব্দে অবিরাম বয়ে চলেছে এসব ঝর্ণা। ঝর্ণার অবিরাম স্রোতোধারা আর নয়নাভিরাম দৃশ্য আমাদের ক্লান্ত শরীর ও মনকে জুড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে প্রায় ৩৫টির অধিক প্রাকৃতিক ঝর্ণা আছে। সবুজের কার্পেট বিছানো পথে কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ জলধারা। সেই শরীর জুড়ানো ঠাণ্ডা পানিতে পা ডুবিয়ে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা ঝর্ণা আবিস্কার করতে চাইলে আপনাকে ছুটতে হবে সীতাকুণ্ড। বাংলাদেশে ঝর্ণার স্বর্গ বলা হয় মিরসরাই সীতাকুণ্ড অঞ্চলকে। কেননা এই রুটেই আছে ১০ টি ঝর্ণা। 

কমলদহ ঝর্ণা

সীতাকুন্ডের পরিচিত ঝর্ণা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কমলদহ ট্রেইলের ঝর্ণা গুলো। মোটামুটি সহজ ট্রেইল এবং অল্প সময়ে কমলদহ ট্রেইলের ঝর্ণা গুলো দেখে আসা যায় বলে ভ্রমণপিয়াসু মানুষের কাছে জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। কমলদহ ট্রেইলে অনেক গুলো ঝর্ণা আছে। এই ট্রেইলের উপরের দিকে ডানে বায়ে ঝিরি পথ ভাগ হয়ে গেছে। ছাগলকান্দা ঝর্ণার আরেক নাম কমলদহ ঝর্ণা।

যেভাবে যাবেন – ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডের বড় দারোগারহাট নামবেন। এখান থেকে একটু হেঁটে পূর্ব পাশের রাস্তা ধরে ঝিরিপথ ধরবেন।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

সুপ্তধারা ঝর্ণা 

ঝরঝরি ঝর্ণা

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা

বোয়ালিয়া ট্রেইল

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের অন্যতম আকর্ষণ এখন বোয়ালিয়া ট্রেইল। ঝরনা, খুম, ক্যাসকেড, ঝিরিপথ এই ট্রেইলটিকে করেছে বহুগুণ দর্শনীয়। এই এক রুটেই আপনি দেখা পাবেন তিনটি ঝরনার।

বোয়ালিয়া ট্রেইলে আছে বোয়াইল্যা, বাউশ্যা, অমরমানিক্য ঝরনা। এ ছাড়া আছে ন হাইত্যে কুম, পালাকাটা খুম, উঠান ঢাল, আন্দারমানিক ঝরনা, তিন নং ছড়া, কলাতলি ঝরনা, লতকাও বা কেম্বাতলী ঝরনা এবং লতা বায়ানী।

দুই দিকে উঁচু পাহাড় আর মাঝখানে গিরিপথ, পাথুরে দুর্গম ঝিরি, যার দুপাশে গহিন জঙ্গল বোয়ালিয়া ট্রেইলকে  করেছে এডভেঞ্চারাস। ঝরনার পানিতে পাহাড়ে তৈরি হয় নতুন পরিবেশ। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বেড়ে ওঠা ঝরনাগুলো তখন ফিরে যায় যৌবনে। ঝরনার শোঁ শোঁ শব্দে প্রাণ চঞ্চল হয়ে ওঠে নিমেষেই। তার পাশাপাশি রয়েছে ট্র্যাকিং পথ ও পর্যটকদের অনেক আকর্ষণ করার বিষয়।

আর এখানে অ্যাডভেঞ্চারের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়। দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে ঝরনার শীতল জলের ছোঁয়া পাওয়ার আনন্দ অন্যরকম।

যেভাবে যাবেন – ঢাকা থেকে নামবেন মিরসরাই বাজারে। মিরসরাই কলেজ রোড থেকে ব্র্যাক পোল্ট্রি ফিড পর্যন্ত যাওয়ার সিএনজি পাবেন। ওখানে নেমে পূর্বদিকে হাঁটা ধরবেন।

হরিণমারা হাঁটুভাঙ্গা ট্রেইল

এই ট্রেইলটা মিরসরাই রুটের অন্যতম সুন্দর একটি ট্রেইল। এই ট্রেইলে পাবেন হরিণমারা, হাঁটুভাঙ্গা এবং সর্পপ্রপাত ঝর্ণা। এছাড়াও সর্পপ্রপাতের পাশে বাওয়াছড়ার মুখ। এই রুটে ঢুকতেই পাবেন অপূর্ব নীলাম্বর লেক।

যেভাবে যাবেন- ঢাকা অথবা চট্টগ্রামী যেকোনো বাসে সীতাকুণ্ডের আগে ছোট কমলদহ বাজার। বাজারের পরের রাস্তা আর বাইপাস যেখানে মিলেছে সেখানে নামবেন। রাস্তার পূর্ব দিকে ঢুকবেন। বাকিটা রাস্তা ধরা গেলে আর ছড়ার পথ ধরে এগিয়ে যাবেন।

সোনাইছড়ি ট্রেইল

এই ট্রেইলটি বাকি ট্রেইলগুলোর তুলনায় অপরিচিত এবং দুর্গম। তবে এককথায় অপার্থিব। বিশাল বিশাল পাথর আর গিরিখাদের সমন্বয়ে এই ট্রেইল। আছে গভীর বাদুইজ্যা কুম। একপাশে পাহাড়ের খাঁজ আর নিচ দিয়ে চলার পথ। অনেক জায়গায় সূর্যের আলোতেও ছায়া পড়ে।

যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে মিরসরাইয়ের পরে নামবেন হাদী ফকিরহাট বাজার। তারপর রাস্তার পূর্ব দিকে হাঁটা ধরবেন।

বাড়বকুন্ড ট্রেইল

এই ট্রেইলে পাবেন বাংলাদেশের একমাত্র গরম পানির ঝর্ণা। বাড়বকুণ্ডের অগ্নিকুণ্ড নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় জনশ্রুতি হলো, প্রাচীনকালে এখানে দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দেওয়া হতো। হঠাৎ একদিন নরবলি দেওয়ার স্থানে আগুন ধরে যায়। সবাই ধারণা করে, নরবলি দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন দেবতা।

অনেক চেষ্টার পরও এই আগুন নেভানো যায়নি। যুগ যুগ ধরে এটি যেন মৃত আগ্নেয়গিরির মুখ; যার ভেতর থেকে সর্বদা আগুন বের হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতানুযায়ী, এটি ধর্মীয় আশীর্বাদ। এই মন্দির দেখভাল করা পুরোহিতের মতে, যদিও এটি ৫১ টি সতীপিট বা শক্তি পিটের মধ্যে একটি।

বাড়বকুণ্ড মন্দিরে উঠার সিঁড়ির পাশে আগে ছিল একটি তেঁতুল গাছ। বর্তমানে সেটি নেই। সেখানেই আছে দধি ভৈরব। এটি একটি গোলাকৃতির শিলাখণ্ড। এর উপরের দিকে একটি গর্ত আছে যেখানে দুধ দিলে তা নিমিষেই দইয়ে পরিণত হয়। এই কারণেই একে দধি ভৈরব বলে।

এই ট্রেইলে মূলত ৩টি ঝরনা আছে। মন্দিরের গেট থেকে থেকে নেমে হাতের বাম দিকে একটি খুম পাবেন। ঠিক তার পাশ ঘেঁষেই যে ঝিরিপথ আছে, তা ধরে ২০-২৫ মিনিট হাঁটলেই প্রথম ঝরনার দেখা মিলবে। ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে গেলেই বাকি ঝরনাগুলো পেয়ে যাবেন। বিশেষ করে শেষ ঝরনার কথা বলতেই হয়, সেটা পর্যন্ত যেতে ধৈর্য থাকার অতি প্রয়োজন। সেটি দেখার পর আপনার শরীরের সারাদিনের ক্লান্তি কেটে যাবে।

যেভাবে যাবেন

বাড়বকুণ্ড ট্রেইল অপরিচিত হওয়ার কারণে অনেকেই সেখানে যান না। অথচ এই ট্রেইল খুবই সুন্দর একটি স্থান। ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী বাসে যেতে হবে সেখানে। বাস থেকে নেমে বাড়বকুণ্ড স্টেশনে পৌঁছাতে পারবেন। সেখান থেকে মাত্র ৫-৭ মিনিট পায়ে হাঁটার পথ।

সহস্রধারা ঝর্ণা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের চিরসবুজ বনাঞ্চল সমৃদ্ধ সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে সহস্রধারা ঝর্ণাটি অবস্থিত। ইকোপার্কটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্ষাকাল ব্যতীত বছরের অন্যান্য সময় এই ঝর্ণায় পানি কম থাকে। ইকোপার্কের মূল গেট থেকে ইটবিছানো পথ ধরে পাঁচ কিলোমিটার গেলে ঝর্ণাটির দেখা মেলে। ঝর্ণাটির খুব কাছে সুপ্তধারা ঝর্ণা নামে আরেকটি ঝর্ণা আছে।

যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড বাজারে নামবেন। এখান থেকে ছোট দারোগাহাটের লোকাল সিএনজি পাবেন।

আরো পড়ুন: চট্রগ্রামের দর্শনীয় স্থান

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বাসে গেলে সীতাকুণ্ড নামা যায়। চট্টগ্রাম শহরের অলঙ্কার মোড় থেকেও বাসে আসা যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। সিএনজি চালিত অটো রিকশা নিয়েও যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহর থেকে। ভাড়া পড়বে ৩০০-৪০০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড

চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে সীতাকুণ্ডে আসতে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বাসে করে যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার, এ কে খান মোড় অথবা কদমতলী যেতে হবে। লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন ৪০- ৮০ টাকা ভাড়ায়।

আরো পড়ুন: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী

সর্বমোট ভ্রমণ খরচ

ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড বাস ভাড়া ননএসি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা এবং এসি ১১৫০ থেকে ১৩০০ টাকা। কমলাপুর থেকে মেইল ট্রেনে ভাড়া পড়বে ১২০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুণ্ড সদরে রাত্রিযাপনের জন্য একাধিক মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে। উন্নতমানের হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে চট্টগ্রাম শহরে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলোঃ

১. হোটেল প্যা রামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম। ভাড়াঃনন-এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা ।

যোগাযোগ : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪।

২. হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম। ভাড়া : নন এসি : ১০০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল। এসি : ১৭২৫ টাকা ।

যোগাযোগ: ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫।

৩. হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম। একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল । ভাড়া : ৭০০ টাকা থেকে শুরু । এসি ১৩০০ টাকা ।

যোগাযোগ: ০৩১-০৬১৪০।

৪. হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ । ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা ।

যোগাযোগঃ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২

৫. হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। ভাড়া-২৩০০/৩৪০০ টাকা যোগাযোগ: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭।