পার্থেনিয়াম-Parthenium
পার্থেনিয়াম ডেজি পরিবারের মধ্যে সূর্যমুখী উপজাতিদের উত্তর আমেরিকান গুল্ম প্রজাতির একটি বংশধর। শিরাযুক্ত, নরম কাণ্ডবিশিষ্ট একবর্ষজীবি, গুল্মজাতীয় আগাছাটির নাম পার্থেনিয়াম। নামটি গ্রিক শব্দ parthenos থেকে উদ্ভূত হয় , অর্থ "কুমারী,"এটি উদ্ভিদের একটি প্রাচীন নাম।
ইংরেজি নাম: Parthenium
বৈজ্ঞানিক নাম: Parthenium hysterophorus
বৈশিষ্ট্যঃ
পত্র খাঁজযুক্ত, অনেকটা চন্দ্রমল্লিকা গাছের পাতার মতো। জন্মের মাসখানেকের মধ্যেই ফুল ধরে। ফুলগুলি সাদা ও ক্ষুদ্রকার। চার মাসের মধ্যে জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে। একটি গাছ থেকে ৪-৫ হাজার গাছ জন্মাতে পারে। এটাই পার্থেনিয়ামের দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণ। বীজ হালকা ও প্যারাসুটের মতো হওয়ার কারণে তা দ্রুতগতিতেই ছড়িয়ে পড়ে এবং এইভাবেই সে তার বংশবিস্তার করে দ্রুততার সাথে বিস্তার করে।
বংশবিস্তারঃ
আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ওয়েষ্ট ইন্ডিজ এবং উত্তর-পূর্ব মেক্সিকো। কিন্তু ভারতবর্ষে এই আগাছা আসার ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসে গৃহীত একটি আইনের নাম পিএল-৪৮০ অর্থাৎ পাবলিক ল -৪৮০। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিকে খাদ্যশস্য সাহায্যের জন্যই এই আইনের অধীনে ভারতবর্ষে পাঠানো হতো গম। সেটা ১৯৪৫ সালের কথা, এদেশ তখনও খাদ্যোৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। এই আমদানিকৃত গমের মধ্যেই এদেশে প্রবেশ করে পার্থেনিয়াম। ১৯৫৫-৫৬ সালে মহারাষ্ট্রের পুনেতে অধ্যাপক এইচ. পি.পরাঞ্জপে প্রথম পার্থেনিয়াম গাছের দেখা পান। অবশ্য ইতিহাস বলছে ১৮৮৮ সালে দেরাদুনের বন গবেষণার অধ্যক্ষ ডি. ব্রান্ডিসের তৈরি হার্বেরিয়ামে পার্থেনিয়াম আগাছার দেখা পাওয়া গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে এই আগাছা প্রথম দেখা যায় ডানকুনি রেলইয়ার্ডে ১৯৭৫ সালে। এখন বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের সর্বত্রই এই গাছ দেখা যায়। ভারতে একমাত্র রাজস্থান বাদে বাকী সবকটি রাজ্যেই এর প্রাদূর্ভাব আছে। এদেশে এই আগাছাটির অধিকৃত জমির পরিমান ৫০-৬০ লক্ষ হেক্টর।
ব্যবহারসমূহঃ
উত্তর আমেরিকায়, জিকারিলা আপাচি মানুষ ওষুধের জন্য পার্থেনিয়াম ইনক্যানাম ব্যবহার করত (ওপলার ১৯৫৬: ৮)। গুয়াউলের রস (পার্থেনিয়াম আর্জেন্টিতাম)।
পার্থেনিয়াম এর অপকারিতাঃ
এই পুরো আগাছাটিই সম্পূর্ণ ক্ষতিকর। বিশেষ করে ফুলের রেনুতে অবস্থিত " সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন " জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ " পার্থেনিন "। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিকগুলি হল, -- ক্যাফেইক অ্যাসিড, পি-অ্যানিসিক অ্যাসিড প্রভৃতি।
ক্ষতস্থানে রক্তের সঙ্গে মিশে চর্মরোগ হতে পারে। যেমন , -- Contact darmatitis, skin alargy, eczema ইত্যাদি।
ফুলের রেনু বা বীজ নাকে প্রবেশ করিলে হাঁপানি , শ্বাসকষ্ট, জ্বর হয়।
গরু এই আগাছা খেলে তার অন্ত্রে ঘা দেখা দেয়, দুধ উৎপাদন কমে যায়।
এর পুস্পরেনু বেগুন, টমাটো, লঙ্কার মতো সব্জি উৎপাদন ব্যহত করে।
মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরনের পক্রিয়াও ব্যাহত করে।
পার্থেনিয়াম ভক্ষণে মোষ, ঘোড়া, গাধা, ভেড়া ও ছাগলের মুখে ও পৌষ্টিকতন্ত্রে ঘা, যকৃতে পচন প্রভৃতি রোগের পাদূর্ভাব দেখা দেয়।
যাদের অ্যলার্জি আছে তাদের অধিক সচেতন থাকতে হবে। কারণ তাদের চামড়ায় এই রস লাগালে, সেখানে ক্যন্সার হতে পারে ।
দমন পদ্ধতিঃ
হেক্টর প্রতি ১-১.৫ কেজি হারে আগাছা নাশক মেট্রিবুজিন প্রযোগ করলে সম্পূর্ণরুপে নষ্ট হয়। খাদ্য লবণের ১৫% দ্রবনে ( ১লিটার জলে ১৫০ গ্রাম লবণ গুলে তৈরি ) আগাছার উপর ছিটিয়ে দিলে আগাছা শুকিয়ে যায়। তারপর শুকনো গাছে আগুন ধরিয়ে দিলেই ধ্বংস করা যায় সহজেই।
সতর্কতাঃ
তবে এই আগাছা দমন করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা একান্তই জরুরী। সমস্তকিছু করতে হবে হাতে রাবারের গ্লাভস বা পলিথিন প্যাকেট জড়িয়ে ও মুখে পাতলা মাক্স পরে নেওয়া যুক্তিযুক্ত। বলা যেতে পারে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়েই এই আগাছায় হাত দেওয়া দরকার , না হলে অসুবিধে হতে পারে। আমাদের চারপাশে যেভাবে এর বিস্তার ঘটছে অনেকটাই অজ্ঞাতসারে।