ব্রহ্ম কমল এর উপকারিতা
ব্রহ্ম কমল এক ধরনের সপুষ্পক উদ্ভিদ। ব্রহ্ম কমল একটি বহুবর্ষজীবী যা ১ ফুট লম্বা হয়। ব্রহ্মকমল মিষ্টি সুবাসযুক্ত একটি ফুল। বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে (জুলাই-আগস্ট) পাহাড়ের শিলা ও ঘাসের মধ্যে ফুল ফোটে। ফুলের মাথা বেগুনি, ফুল হলুদ-সবুজ । জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফুলগুলি দেখা যায়, তারপরে গাছের উপরের মাটির অংশগুলি আবার মরে যায় এবং এপ্রিল মাসে আবার দৃশ্যমান হয়। এর অন্য নামগুলো হলো: ব্রহ্মকমল, কন, কাপ্ফু, পাথরের পদ্ম, হিমালয় পদ্ম। গাছটি সারা বছর বেঁচে থাকে না। ফুল ফোটার পরপরই মরে যায়।
ইংরেজি নাম: Brahma Kamal
বৈজ্ঞানিক নাম: Saussurea obvallata
বিস্তার
ভারত, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে হিমালয়ের আলপাইন তৃণভূমির স্থানীয়।
চাষাবাদ
ব্রহ্ম কমল ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে, বিশেষ করে হিমালয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের রাজ্য ফুলও। উত্তরাখণ্ডে একে কৌলপদম নামেও ডাকা হয়, উত্তরাখণ্ডের অনেক জেলায় এর চাষ হয়।
ব্রহ্ম কমল এর ঔষদি গুণাগুণ
ভেষজ ওষুধ তৈরিতে এই উদ্ভিদটি ব্যবহার করা হয়। ব্রহ্ম কমল ফুল হারবাল মেডিসিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাই এই ফুলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করে
ব্রহ্ম কমলের ফুল লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এই ফুল লিভারের জন্য একটি সেরা টনিক হিসেবে কাজ করে। ব্রহ্ম কমলের ফুল লিভারকে ফ্রি র্যাডিকালের কারণে হওয়া ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এ জন্য ব্রহ্ম কমল ফুলের স্যুপ বানিয়ে পান করতে পারেন। এটি শরীরের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে।
ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে
ক্ষত সারাতেও ব্রহ্ম কমল ফুল ব্যবহার করা যেতে পারে। আসলে, ব্রহ্ম কমলে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বককে ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ত্বকে কোনও আঘাত লেগে থাকলে ব্রহ্ম কমল ফুল এতে উপকারী হতে পারে। এটি ক্ষত দ্রুত নিরাময় করতে সাহায্য করতে পারে। এর জন্য ব্রহ্ম কমল ফুলের পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগান। এতে রক্তপাত বন্ধ হবে এবং ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।
স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী
ব্রহ্ম কমল ফুল স্নায়বিক সিস্টের জন্যও উপকারী হতে পারে। এটি স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ফুলে অ্যাসিটিন নামক একটি পদার্থ রয়েছে যা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিকনভালসেন্ট। এছাড়া এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ব্রহ্ম কমল শরীরের রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু যদি আপনার স্নায়ুতন্ত্র সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে এই অবস্থায় শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শেই এটি সেবন করুন।
সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করে
আপনার যদি প্রায়ই সর্দি-কাশি হয় তবে এই অবস্থায় আপনি ব্রহ্ম কমল ফুল খেতে পারেন। এই ফুল সর্দি, কাশি নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। ব্রহ্ম কমল ফুলের প্রদাহরোধী এবং ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণ রয়েছে। এই উপাদানগুলো শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও জীবাণু প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। হাঁপানি ও ব্রংকাইটিসের চিকিৎসায় আয়ুর্বেদেও ব্রহ্ম কমল ফুল ব্যবহার করা হয়।
জ্বর সারাতে উপযোগী
ব্রহ্ম কমলের ফুলে অ্যান্টিপাইরেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অর্থাৎ এটি জ্বরের চিকিৎসায় সাহায্য করে। ব্রহ্ম কমল ফুলের ক্বাথ পান করলে জ্বরের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জ্বর হলে এই ফুলের ক্বাথ তৈরি করে দিনে দুবার পান করতে পারেন। এটি আপনাকে অনেকটা স্বস্তি দেবে।