আপাং গাছের উপকারিতা ও ভেষজ গুণাবলী
আপাং একটি বর্ষজীবী বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। স্থানভেদে ইহা ১–৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাণ্ড শাখান্বিত। পাতা সরল, প্রতিমুখ, অনেকটা ডিম্বাকৃতির অথবা ইলিপ্টিক্যাল, ৩-৫ ইঞ্চি লম্বা, মঞ্জরী সরল স্পাইক, পুষ্প ক্ষুদ্র, সমাঙ্গ; মঞ্জরীপত্র ও পেরিয়েন্থ শুষ্ক শল্কপত্রের মত; পুংকেমর ৫টি, স্ত্রীকেশর ২টি, ফল নাটলেট, শক্ত ও পক্ষলযুক্ত, কাপড়ে বা জীবজন্তুর গায়ে আটকিয়ে যায়। গ্রীষ্মের শেষ দিকে ফল শুষ্ক হয় এবং মাটিতে পড়ে যায়। বীজ কালো ।
স্থানীয় নাম: আপাং, চিরচিরে,সিসা গন্ধ, রক্ত আপাং, উপুতলেংগা
ইংরেজী নাম : Apang, Prickly chaff flower,Chaff flower
বৈজ্ঞানিক নাম: Achyranthes aspera
ব্যবহার্য অংশ: মূল, কাণ্ড, পাতা ও বীজ অর্থাৎ সমস্ত উদ্ভিদ।
বিস্তার
বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিয়ানমার, পৃথিবীর, বিভিন্ন দেশে এই গাছ জন্মে।
১.অর্শ রোগে
আপাং-এর বীজ তিন গ্রাম এবং আতপ চাল ধোয়া পানি দিয়ে ভালোভাবে বেটে সকালে একবার করে খেলে অর্শের যন্ত্রণা এবং রক্তপড়া বন্ধ হয়ে যায়। মোট তিন থেকে চার দিন নিয়ম করে খাওয়া দরকার।
২.কাটা ও রক্তপাতে
আঘাত লেগে কেটে গেলে অথবা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কাটলেে এবং রক্ত বের হলে আপাং এর টাটকা রস কাটা স্থানে দিলে সাথে সাথে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।তবে রসটা পরিমানে একটু বেশী হতে হবে।
৩.বেশি ঋতুস্রাব
ঋতুস্রাবের পরিমাণ অনুসারে দুই থেকে চার গ্রাম পরিমাণ আপাং-এর টাটকা মূল সামান্য পানি দিয়ে বেটে খেলে স্রাবের পরিমাণ নিশ্চয় কমবে। যদি দেখা যায় স্রাব স্বাভাবিক হয়নি, তাহলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বাদে একই পরিমাণ মূল বাটা আরও একবার খাওয়া দরকার। তবে এটা নির্ভর করে ঋতুস্রাবের পরিমাণের ওপর।
৪.জ্বরে
একদিন পর পর জ্বর উঠলে আপাং গাছের মূল ছেঁচে রস করে দিনে দু’ বার খেলে জ্বর ভাল হয়।
৫.অকালপ্রসবে
অকালপ্রসবের সম্ভাবনা দেখা দিলে যে আপাং গাছের ফুল অর্থাৎ মঞ্জরী হয়নি এমন চারাগাছ গোড়া থেকে মূল সমেত তুলে গর্ভবতীর কটিদেশে বেঁধে দিলে অকাল প্রসবের ভয় থাকে না। এটা বহু পরীক্ষিত এবং সত্য ঘটনা।
৬. দাদ রোগে
আপাং গাছের শুকনা ডাঁটা আগুনে পুড়িয়ে ক্ষার তৈ্রী করে নিতে হবে।৮ গ্রাম সেই ক্ষার এবং জলপাই তিল তেল দিয়ে মেখে দাদের উপর ঘষে ঘষে লাগাতে হবে।ইনশা আল্লাহ ৪-৫ দিনের মধ্যে উপকার পাবেন।
৭.ফোড়ার পুঁজ বের করতে
আপাং গাছের টাটকা পাতা আট থেকে দশটি এবং আতপ চাল চার গ্রাম, উভয়কে সামান্য ঠাণ্ডা পানি দিয়ে বেটে ফোঁড়ার চারপাশে প্রলেপ দিলে ভিতর থেকে পুঁজ ও দূষিত রক্ত বের হয়ে আসে। তবে দিনে দু-তিন বার প্রলেপ দেয়া দরকার।
৮.প্রসাবের সমস্যায়
আপাং এর ক্বাথ (decoction) ৩০ থেকে ৫৮ গ্রাম মাত্রায় দিনে তিনবার সেবন করলে মূত্রকষ্ট দূর হয় এবং প্রচুর পরিমাণে প্রসাব হয়। মূত্রবৃদ্ধি করে বলে শোথ রোগে এর বহুল ব্যবহার আছে। ৫৮ গ্রাম আপাং চূর্ণ ১১৬ গ্রাম পানিতে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করলে যে ক্বাথ পাওয়া যায় তা থেকে ৩০ গ্রাম হতে ৫৮ গ্রাম মাত্রায় দিনে তিনবার সেবন করলে প্রচুর প্রস্রাব হয় এবং শোথ রোগ কমে যায়।
৯.অঙ্গ ফুললে
আপাং গাছের কচি ডাল, পাতা ও মূল ২৫ গ্রাম পরিমাণ টাটকা তুলে একটা মাটির পাত্রে নিতে হবে; এগুলো কেটে ছোট টুকরা করে দিলে আরও ভালো হয়। এরপর পাত্রে ২০০ মি.লি. পানি দিয়ে মৃদু কাঠের জ্বালে সিদ্ধ করতে হবে। পনের থেকে বিশ মিনিট সিদ্ধ হলে পাত্রটি আঁচ থেকে নামিয়ে সকালে ৩০ থেকে ৪০ মি.লি. এবং সন্ধ্যায় একই পরিমাণে খেলে রোগীর খুব শীঘ্রই উপশম হয়। তবে চার পাঁচদিন রোগীকে সিদ্ধ করে সে পানি খেতে হবে। বাসি পানি খাওয়া উচিত নয়।
১০.ক্ষুদা সমস্যায় আপাং
যাদের ক্ষিদে হয় না জোর করে খেলে হজম হয় না তাঁরা ৮ ভাগ আপাং-এর শিকড় এবং ১ ভাগ গোলমরিচ বেঁটে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করবেন এবং বড়িগুলি ছায়াতে শুকিয়ে প্রত্যহ সকাল-বিকাল খাবারের পর পানিসহ একটি করে বড়ি খাবেন। এতে করে স্বাভাবিক ক্ষুধা তৈরি হবে।
১১.কলেরা রোগে
এ অসুখে আক্রান্ত হবার সাথে সাথে গাছের টাটকা মূল চার গ্রাম সামান্য পানি দিয়ে বেটে খেলে অবশ্যই উপকার হবে। তবে ওষুধ অল্প মাত্রায় বারে বারে খেতে হবে। বাটা মূল আধা কাপ পানিতে গুলে এক থেকে দু’চামচ পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় মিনিট অন্তর খেতে হবে। এভাবে খাওয়াবার উদ্দেশ্য হলো যাতে একসাথে ওষুধ খেলে পেটে চাপ পড়ে রোগীর মলের সাথে ওষুধ বেরিয়ে না যায়।
১২.দ্রুত বীর্যপাত সমস্যার সমাধান
শিঘ্র পতন, দ্রুত বীর্যপাত, দ্রুত বীর্য পাত না হওয়ার উপায়, বীর্য পাতলা, বীর্য তরল, বীর্য গাঢ় করার উপায়, বীর্য ধরে রাখার উপায় সহজে বীর্য পাত না হওয়ার উপায়, বীর্য স্তম্ভন, শুক্র স্তম্ভন, বীর্য স্তম্ভন করার উপায়, শুক্র স্তম্ভন করার উপায়।
আপাং সধারনত ২ রংয়ের সাদা ও লাল বা রক্ত আপাং বলে। রক্ত আপাং, এর শিকড় সমবার দিন তুলে সংগ্রহ করতে হবে এবং পরের দিন মঙ্গল বারে কোমরে ধারন করবেন। যে কোন সুত বা যেকোন কিছু দিয়ে ধারন করতে পারবেন। তারপর আস্তে আস্তে দ্রুত বীর্য পাত বন্ধ হয়ে উপকার পেতে শুরু করবেন।
১৩.চুল পাকলে
আপাং-এর টাকা শিকড় বেটে (কতটা পরিমাণ বাটা হবে তা নির্ভর করছে কি পরিমাণ চুল পেকেছে তার ওপর, ছেলেদের কম লাগবে এবং মেয়েদের লম্বা চুলে বেশি লাগবে।) দুপুরে গোসল করতে যাবার দু-তিন ঘণ্টা আগে সারা মাথায় ব্যবহার করলে উপকারটা সহজেই বুঝতে পারা যাবে। এতে একদিকে চুলের রং যেমন কালো হবে, তেমনি নতুন চুলও গজাবে।
১৪.বিষাক্ত ক্ষতে
কোনো কারণে ক্ষতস্থান যদি বিষিয়ে যায় এবং নানা ওষুধ প্রয়োগ করে ভালো না হয়, তবে আপাং গাছের পাতা ও কচি ডাল বেটে তার রস দশ-পনর মি.লি. এক থেকে দেড় চামচ গাওয়া ঘি দিয়ে ভেজে সেটা সকালে একবার, রাতে শোয়ার সময় আরও একবার ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষত দ্রুত সেরে উঠবে। তবে একটা পরিষ্কার ফালি কাপড় দিয়ে হালকাভাবে ক্ষতস্থান বেঁধে রাখলে ভালো। তা না হলে ঘুমের ঘোরে বিছানা নোংরা হবে।
১৫.খোসপাঁচড়া ও চুলকানি
পাঁচ গ্রাম আপাংগাছ দুই কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে এক কাপ করে ছেঁকে পানিটুকুু দিনে দুই থেকে তিনবার পান করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ দিন নিয়মিত পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
১৬.দাঁতের ব্যথায়
দাঁতের ব্যথায় ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। আপাংগাছের শুকনো গুঁড়া কুষ্ঠরোগ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। আপাংগাছের পাতা গনোরিয়া ও শ্বাসকষ্ট ভালো করে। পাতার রস পোকার কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে, শ্বাসকষ্ট, কান ও চোখের সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। বীজের গুঁড়া মাখন ও দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পিত্তে পাথর হয় না।