সাদা তুলসীর উপকারিতা ও গুনাগুন- Benefits and properties of white tulsi
সাদা তুলসী হলো ল্যামিয়াসিয়াই (পুদিনা) গোত্রের একটি উদ্ভিদ। এই প্রজাতি বাবুই তুলসী, দুলাল তুলসী, গুলাল ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
ইংরেজি নাম: great basil
বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum basilicum
বর্ণনা
সাদা তুলসী একবর্ষজীবী বা কখনো কখনো বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর মূলত পাতাই ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদের প্রকরণের ওপর নির্ভর করে সাদা তুলসী ৩০–১৫০ সেমি (১–৫ ফু) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর পাতা সবুজ ও ডিম্বাকার; তবে জাতের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন আকার হতে পারে। পাতা ৩–১১ সেমি পর্যন্ত লম্বা এবং ১–৬ সেমি পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে। সাদা তুলসীর প্রধান মূল মোটা ও কেন্দ্রীয়। এর ফুল ছোট ও সাদা। গাছের একদম উপরে প্রধান কাণ্ড থেকে উদ্ভূত কেন্দ্রীয় পুষ্পমঞ্জরিতে ফুল জন্মায়।
আবাস ও বিস্তার
সাদা তুলসী ভারত এবং আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ক্রান্তীয় অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। তবে মানুষের চাষের জন্য বিশ্বব্যাপী সাদা তুলসী জন্মায়।
সাদা তুলসীর ঔষধি গুনাগুন
• এই শীতে কাশি থেকে রক্ষা পেতে তুলসী পাতা ও আদার রসের সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে খেতে পারেন এতে উপকার পাবেন।
• সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের রুচি বাড়বে।
• ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, বলিরেখা ও ব্রণ দূর করতে তুলসী পাতার রস লাগাতে পারেন।
• ম্যালেরিয়া জ্বরে তুলসী পাতার রস খেলে দ্রুত জ্বর ভাল হয়ে যায়।
• তুলসী পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সে পানিতে গড়গড়া করলে মুখ ও গলার রোগজীবাণু মরে, শ্লেষ্মা দূর হয় ও মুখের দুর্গন্ধও দূর হয়।
• তুলসী চা শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর করে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়।
• এই ঠাণ্ডা মৌসুমে ছোট বাচ্চাদের তুলসী পাতা খাওয়ালে কৃমি দূর হবে এবং মাংসপেশি ও হাড় হবে শক্তিশালী।
• তুলসী গাছের বীজও যথেষ্ট উপকারী। এর বীজ শুকিয়ে মিহি করে খেলে প্রস্রাবের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ভাল হয়।
• চর্মরোগ দূর করতে তুলসী পাতা দুর্বাঘাসের ডগার সঙ্গে বেটে মাখলে উপকার পাবেন।
• শরীরে কোনোরকম ঘা থাকলে তুলসী পাতা ও ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে লাগাতে পারেন।
• এটি উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
• এটি যকৃতের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
• চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে সকালবেলা চোখ ধুয়ে ফেলুন।
রান্নায় ব্যবহার
সাদা তুলসী রান্নায় মূলত কাঁচা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। উত্তাপে এর গন্ধ সহজে নষ্ট হয়ে যায় বলে সাধারণত একে সবার শেষে যোগ করা হয়। ফুটন্ত পানিতে দ্রুত ব্লাঞ্চিংয়ের পর স্বল্প সময়ের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগে ফ্রিজে কিংবা দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্রিজারে সংরক্ষণ করা যায়।
সাদা তুলসী জলপাই তেল দিয়ে তৈরি ইতালীয় সস পেস্তোর অন্যতম প্রধান উপাদান। এছাড়া এটি ইতালীয় মারিনারা সসেরও অন্যতম মূল উপাদান।
চীনে বিভিন্ন স্যুপ ও অন্যান্য খাবারেও টাটকা বা শুকনো উভয় অবস্থায় তুলসীর ব্যবহার রয়েছে। তাইওয়ানে স্যুপকে ঘন করতে তুলসী ব্যবহৃত হয়। সে দেশে কড়কড়ে ভাজা তুলসীর পাতা দিয়ে মুরগি ভেজেও খাওয়া হয়ে থাকে। আইসক্রিম ও চকলেটে (যেমন ট্রাফলস) একটি সুন্দর গন্ধ আনার জন্য ক্রিম ও দুধে তুলসী (প্রধানত থাই তুলসী) মেশানো হয়। সাদা তুলসীর শুধুমাত্র পাতাই খাওয়া হয় না, এর ফুলেরও খুব সুন্দর ও হালকা গন্ধ আছে এবং এগুলো খাওয়ার উপযোগী।
পানিতে ভেজানো হলে সাদা তুলসীর বীজ পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পানীয় ও মিষ্টান্ন তৈরিতে সাদা তুলসীর বীজ ব্যবহার করা হয়। ভারতে ফালুদা বা ইরানে শরবতে রিহান কিংবা ভিয়েতনামে হত-এ তৈরিতে এর বীজ ব্যবহৃত হয়।