চুকুর বা চুকাই পুষ্টিগুণে ও ভেষজ গুণে অনন্য
চুকাই একটি টক জাতীয় সু-স্বাদু ফল। এটিকে নানাভাবে খেয়ে থাকেন। শুধু চুকাই ফলই নয়, এর পাতার জনপ্রিয়তাও ফলের মতোই সমান। এটি খেতে যেমন সু-স্বাদু, তেমনি ব্যাপক ভেষজ গুণের অধিকারী। বিভিন্ন রোগ-বালাই নিরাময়সহ সুস্থ্য থাকার জন্য অতুলনীয় এই ফল ও পাতা।
চুকাই মূলত একপ্রকার উপগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের ফল। সিলেটে এটিকে চুকাই বা হইলফা বলা হলেও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন- অম্ব মধু, অম্বল মধু, চুকুল, মেডশ, মেট্টস, মেষ্টা, চুকুর, চুকুরি, চুপুরি, চুকোর, চুকা, চুক্কি, গোডা ইত্যাদি। আবার বিশ্বেও অন্যান্য দেশে ডাকা হয় আরো সুন্দর ও ভিন্ন ভিন্ন নামে।
ইংরেজি নাম: Rosella
বৈজ্ঞানিক নাম: Hibiscus sabdariffa
আদি নিবাস
পৃথিবীর অনেক দেশেই এই গাছের বাণিজ্যিক চাষ করা হয়। এটির আদি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পাওয়া যায়।
পুষ্টিগুণ
চুকুরের পাতা ও ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কেরোটিন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়। বীজে প্রায় ২০ শতাংশ তেল পাওয়া যায়, যা খাদ্য উপযোগী। এই তেলে ১৫.৮ শতাংশ পালমিটিক এসিড, ৬.৮ শতাংশ স্টিয়ারিক এসিড, ৫১ শতাংশ অলিক এসিড ও ২৬.৮ শতাংশ সিনোলিক এসিড থাকে। চুকুরের পুষ্টিগুণ খুবই অবাক হওয়ার মতো। তবে সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা সচেতন নই। চুকুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
ঔষধি ব্যাবহার
১.চুকুর বা চুকাইতে রয়েছে হাইপারটেনশন এটি ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হার্টের জন্য উপকারী ।
২.চুকুর বা চুকাই ত্বকের অসুখ রোধ করতে সাহায্য করে।
৩.চুকুর বীজের তেল বহুবিধ ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে।
৪.দেহের চর্বি এবং বডিমাস ইনডেক্স কমাতে বৃতির নির্যাস ভালো কাজ করে। দেহের ওজন কমাতে এবং বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৫.লবণ, মরিচ ও গুড় মিশ্রিত চুকুরের রস কফ ও কাশির প্রতিকারে ভূমিকা রাখে।
৬.কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল জমা হওয়া রোধে বৃতির নির্যাস ভালো কাজ করে।
৭.প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে চুকুরের বৃতির নির্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮.চুকুরের চা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খুব পরিচিত। এই চা মানুষের উচ্চ রক্তচাপ কমায়। চুকুরের বৃতির নির্যাসে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে- যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ভূমিকা পালন করে।
৯.এর ফুলের নির্যাসে অ্যান্টিডায়াবেটিক উপাদান রয়েছে এবং এর নির্যাস পুরুষের শুক্রাণু ধ্বংস কমায়।
১০.এ গাছের নির্যাসে উচ্চমাত্রার প্রোটোক্যাটেচিক এসিড থাকে- যা লিউকেমিয়া, লিভার ক্ষতি, উচ্চ রক্তচাপ এবং পাইরেক্সিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
খাবার হিসেবে ব্যাবহার
চুকুরের পাতার ভর্তা ও কচি কান্ড সালাদ এবং মাছের সঙ্গে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। চুকুর বা মেস্তার ফল গাছের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ- যার মাংসল বৃতি ভক্ষণযোগ্য। ফ্রেশ বৃতি তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। তাছাড়া চুকুরের বৃতি দিয়ে আচার, জ্যাম, জেলি, সরবত, সস, জিলেটিন, ফ্লেভার, কেক, আইসক্রিম, সিরাপ, পুডিং ইত্যাদি তৈরি করা যায়। এছাড়া চুকুরের বৃতি থেকে চা বানানো যায়- যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য
#প্রদীপ দাশগুপ্ত
সমৃদ্ধ হলাম।