গয়ার পাখি-Oriental Darter
Oriental Darter

Oriental Darter

গয়ার পাখি

গয়ার আনিঙ্গিডি পরিবার বা গোত্রের অন্তর্গত এক প্রজাতির জলজ পাখি। পানির মধ্যে সাঁতার কাটার সময়ও এদের লম্বা গলা ও মাথা এমনভাবে রাখে, যা দেখতে সাপের মতো লাগে। তাই এদেরকে সাপ পাখি বা সাপগলা পাখি নামেও ডাকা হয় ।  

ইংরেজি নাম: Oriental Darter

বৈজ্ঞানিক নাম: Anhinga melanogaster

বিবরণঃ

গয়ার বেশ বড় পাখি। পানকৌড়ি প্রজাতির এ পাখির লম্বা গলা হুবহু সাপ আকৃতির। শরীরটা যখন জলের তলায় অথবা ঝোপ-জঙ্গল কিংবা কচুরিপানার ভেতর লুকিয়ে রেখে গলাটা সামনে বাড়িয়ে দেয়, দূর থেকে এদের দেখে তখন সাপই মনে হয়। মাথা ও ঘাড়ের উপরের দিক গাঢ় বাদামী, যা পিঠে ও বুকে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কালো আকার ধারণ করে যা লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত। অংশফলক এবং ঢাকনি পালকে দু’দিক চোখা ফলকাকৃতির অসংখ্য সাদা পালক থাকে। ঘাড়ের পাশ দিয়ে দু’দিকে একটি করে লম্বা সাদা ডোরা দেখা যায়। গলা ও ঘাড়ে সাদার আভা থাকতে পারে। পানকৌড়ির ঠোঁট যেমন বড়শির মতো বাঁকানো, এদেরটা তেমনি সম্পূর্ণ বিপরীত। সোজা সুচালো। ঠোঁটে হলুদ বা কমলা রঙের। চোখের বলয়টা সাদা। পুরুষের গলায় কিছু সাদা চিতি থাকে। যুবা পাখির মাথা, গলা এবং পিঠের দিক ফিকে বাদামী। প্রাথমিক পালকের মধ্যে বুক থেকে লেজ পর্যন্ত পালক বড়দের মত কালো। পা লিপ্তপাদ, অর্থাৎ পায়ের আঙুলগুলো হাঁসের পায়ের মত পাতলা চামড়া দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত থাকে। পা বাদামী বা কালো। দৈর্ঘ্যে এরা ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এরা ১৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

বিচরণঃ

দেশের বড় বড় হাওর, বিল, নদী ও হ্রদে মাঝেমধ্যে এদের দেখা মেলে। সচরাচর একা, জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। পানিতে ডুব দিয়ে ছোরার মতো ঠোঁট দিয়ে মাছ শিকার করে। ‘চিগি-চিগি-চিগি’ স্বরে ডাকে। পানিতে পুঁতে রাখা বাঁশে, গাছের শাখায় বা মাটিতে সুন্দর ভঙ্গিমায় ডানা মেলে রোদ পোহায়।

আচরণঃ

গয়ার জলচর পাখি। ডুব দিয়ে একনাগাড়ে দু-তিন মিনিট কাটাতে পারে। একবার কোনো শিকারের পিছু নিলে শিকার না ধরে ভেসে ওঠে না। মোটামুটি মাঝারি আকৃতির মাছও এদের সুচালো ঠোঁটের মাথায় গাঁথতে সক্ষম হয়। এরা শিকার ধরেই গিলে ফেলে না। জলের ওপর ভেসে তারপর গলাধঃকরণ করে। গয়ারের পালক হাঁসের পালকের মত নয়, পালক পানি শোষন করে। পালক যখন ভিজে ভারী হয়ে যায়, তখন ঠিক পানকৌড়ির মতো ডাঙায়, কঞ্চির উপরে বা বাঁশের মাথায় বসে ডানা মেলে ধরে শুকিয়ে নেয়।

সাধারণত একটি জলাশয়ে বা এলাকায় এক জোড়ার বেশি থাকে না। বেশিরভাগ সময় এরা পানকৌড়ি, বক, মদনটাক, বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস, শামুকভাঙা এদের সাথে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। পানিতে চলার সময় প্রায় সাবমেরিনের মত সারা দেহ ডুবিয়ে কেবল মাথা পানির বাইরে রেখে সাঁতার কাটতে পারে। প্রয়োজনে আলগোছে মাথাটি পানির নিচে টেনে নিয়ে একেবারে গুম হয়ে যেতে পারে। কয়েক মিনিট পর ফের ভেসে ওঠে ঠোঁটে একটি মাছ চেপে। উড়ার সময় গলা S-অক্ষরের মত গুটিয়ে রাখে।

খাদ্য তালিকাঃ

এদের প্রিয় খাবার মাছ হলেও ব্যাঙ, শামুক, ফড়িং ও জলজ উদ্ভিদের নরম ডগা এমনকি সাপের বাচ্চাও খায়।

প্রজননঃ

জুন থেকে ডিসেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম। সাধারণত পানির আশপাশে এরা বাসা বাঁধে গাছের ওপর শুকনো সরু ডালপালা দিয়ে পুরুষ এবং স্ত্রী পাখি মিলে বাসা বানায়। স্ত্রী তাতে পাঁচ-ছয়টি সবুজাভ-নীল রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে ২৪-২৬ দিনের প্রয়োজন হয় । বাচ্চাদের লোম ১২ দিনের মধ্যে গজিয়ে যায়। উড়তে শেখে ৪৫ দিনে। সাধারণত বছরে এরা একবার ডিম দেয়, তবে কিছু কিছু পাখি দুবারও ডিম দিয়ে থাকে। 

বিস্তৃতিঃ

বিশাল এলাকা জুড়ে গয়ারের আবাস হলেও এদের সংখ্যা বেশ কম এবং দিন দিন সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। সারা দুনিয়ায় প্রায় ৪০০০টি গয়ার রয়েছে। মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশই গয়ারের মূল আবাসস্থল। এছাড়া এই এলাকার বাইরে বিভিন্ন বিষূবরেখা সংলগ্ন এলাকাতেও গয়ার দেখা গেছে। বিভিন্ন দেশে এদের অবস্থা বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল,পাকিস্তান,শ্রীলঙ্কা,মিয়ানমার,কম্বোডিয়া,থাইল্যান্ড,ভিয়েতনাম,লাওস,ইন্দোনেশিয়া, এছাড়া সিঙ্গাপুরেও এরা স্থানীয়। মালয় উপদ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলে এরা অন্য দেশ থেকে মাঝেমাঝে চলে আসে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ পালাউয়ে এদের দেখা গেছে।

অবস্থাঃ

প্রধানত বাসস্থান ধ্বংসের কারণে বিশ্বব্যাপী গয়ারের পরিমাণ দিন দিন কমছে। শিকারীর গুলিতেও বহু পাখি মারা পড়ছে। মানুষ অনেকসময় এদের ডিম ও বাচ্চা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে এরা প্রায়-বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।


পাতি পাপিয়া-Common Cuckoo
খয়েরিমাথা বসন্তবৌরি-Brown-headed barbet
তিলা মুনিয়া-Scaly-breasted munia
নীলশির-Mallard
জলপিপি-Bronze Winged Jacana
উত্তুরে খুন্তেহাঁস-Northern shoveler
লক্ষ্মীপেঁচা পাখি-Barn owl
গোলাপি শির-Pink-headed duck
ধলাগলা সুইবাতাসি-White-throated needletail
পোষা পাখির রোগ ও চিকিৎসা-Diseases and treatment of pet birds