জলার তিতির- Swamp Francolin
জলার তিতির ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত ফ্র্যাঙ্কোলিনাস (Francolinus) গণের এক প্রজাতির বড় তিতির। এরা দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও নেপালের স্থানীয় পাখি।
ইংরেজি নাম: Swamp Francolin
বৈজ্ঞানিক নাম: Francolinus gularis
বর্ণনাঃ
এশীয় তিতিরদের মধ্যে জলার তিতির সবচেয়ে বড় আকৃতির। এদের দৈর্ঘ্য ৩৭ সেমি, ওজন ৫০০ গ্রাম, ডানা ১৭.৫ সেমি, ঠোঁট ২.২ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড় বাদামি; হালকা পীত বর্ণের পিঠে বাদামি ডোরা ও লালচে-বাদামি পট্টি থাকে; হালকা পীত রঙের ভ্রু-রেখা ও গালের ডোরার মধ্যে থাকে মলিন বাদামি চক্ষু-রেখা; লেজটা তামাটে, লেজের প্রান্ত ফিকে; গলা ও ঘাড়ের উপরের অংশ কমলা এবং দেহতলের শেষাংশ প্রশস্ত সাদা ডোরাসহ বাদামি; চোখ গাঢ় লাল অথবা বাদামি ও চোখের পাতা হালকা খয়েরি-সবুজ; সাদা আগাসহ পাটকিলে ঠোঁট; পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ কিংবা অনুজ্জ্বল লাল। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন, তবে শুধু পুরুষপাখির পায়ে গজালের মত খাড়া নখর আছে।
স্বভাবঃ
জলার তিতির প্রধানত জলার তৃণভূমি বা নদীসংলগ্ন তৃণভূমি পছন্দ করে। এছাড়া বনসংলগ্ন ঘাসভূমি কিংবা ঝোপঝাড়েও বিচরণ করে। এছাড়া ধানক্ষেত বা আখক্ষেতেও চরে বেড়ায়। এদের লম্বা পা জলায় চলাফেরা করার উপযোগী। এর মাজে মধ্যে কর্কশ গলার ডাকে: চুক্রিরু, চুকিরু, চুকিরু; ভয় পেলে ডাকে: কিউ-কেয়ার..; এবং তীক্ষ্ম কণ্ঠে ‘গান’ গায়: চুলি-চুলি-চুলি …।
প্রজননঃ
প্রজনন ঋতু স্থানভেদে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত। বাসা বানানো হয় প্রধানত ঘাসবনে। ঘাস আর আগাছা দিয়ে শক্তপোক্ত গোলাকার বাসা বানানো হয়। বাসায় ৪-৬টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।
খাদ্য তালিকাঃ
পোকামাকড়, শস্যদানা, ঘাসের কচিডগা ও আগাছার বীজ। উইপোকা প্রিয় খাবার।
বিস্তৃতিঃ
জলার তিতির বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; এক সময় ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমি ও নলবনে পাওয়া যেত, এখন নেই। ভারত ও নেপালসহ কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থাঃ
প্রজাতিটি বিশ্বে সংকটাপন্ন ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত।। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Vulnerable বা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে।