
সিগারেট খাওয়া কি হারাম নাকি হালাল? ইসলাম কি বলে?
মদ মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে। তাই মদ খাওয়া হারাম। বিড়ি-সিগারেট যেহেতু ব্যক্তিকে মাতাল করে না, আর তা মাতাল হওয়ার জন্যও খাওয়া হয় না, এতে এমন কোনো পরিমাণ বস্তুও নেই, যা সেবন করলে ব্যক্তি মাতাল হয়ে পড়বে; তাই সিগারেট খাওয়া হারাম নয়। বরং তা মাকরুহ। দুর্গন্ধ ও ক্ষতিকর হওয়ার কারণে এটা হারামের পর্যায়ে পড়ে। কারো যদি এমন হয়, সিগারেট না খেলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, তখন এটা সম্পূর্ণ হারাম বলে বিবেচিত হবে।
“হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, প্রতিটি মাতাল করে দেয়া বস্তুই মদ। আর প্রতিটি মদই হারাম। (মুসলিম ২০০৩, ইবনে মাজাহ ৩৩৯০, মুসনাদে আহমাদ ৪৮৩০)“
ধূমপানের অভ্যাসে আর্থিক অপচয় ও সাস্থ্যগত গুরুতর ক্ষতি থাকায় ধূমপানের অভ্যাস করা নাজায়েজ। সম্পদ অপচয় করা ও নিজের শরীরের ক্ষতি করা গুনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَلا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
তোমরা নিজের হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। (সুরা বাকারা: ১৯৫)
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, যারা রাসুলকে অনুসরণ করে, তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ জায়েজ করেন এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তু তাদের জন্য হারাম করেন। আল্লাহ বলেন,
اَلَّذِیۡنَ یَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ الَّذِیۡ یَجِدُوۡنَهٗ مَکۡتُوۡبًا عِنۡدَهُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ یَاۡمُرُهُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهٰهُمۡ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُحِلُّ لَهُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیۡهِمُ الۡخَبٰٓئِثَ
যারা সেই নিরক্ষর রাসূলের অনুসরণ করে চলে যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইনজিলে লিখিত পায়, যে মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয় ও অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করে, আর সে তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ জায়েজ করে এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তু তাদের জন্য হারাম করে। (সুরা আরাফ: ১৫৭)
জনসমক্ষে ধুমপান করলে বা ধুমপানের গন্ধ মুখে নিয়ে জনসমাগমে গেলে তা অন্যদের কষ্ট ও ক্ষতির কারণ হয়। এটাও গুনাহের কাজ। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন,
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِي جَارَهُ.
যে আল্লাহ তাআলা ও শেষ দিবসের ওপর ইমান রাখে সে যেন তার আশপাশের মানুষদের কষ্ট না দেয়। (সহিহ বুখারি)
সিগারেট খেলে কি ৪০ দিন ইবাদত কবুল হয় না
‘সিগারেট খেলে ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয় না’–এটা সঠিক নয়। মদ্যপায়ীর ক্ষেত্রে হাদিসে এসেছে, যে মদ পান করবে তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল হবে না।
সিগারেট খেলে কি নামাজ হবে
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে পেঁয়াজ, রসুন এবং পেঁয়াজের মতো গন্ধ হয় এমন কোনো সবজি খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদের ধারে কাছেও না আসে, কারণ মানুষ যে খারাপ গন্ধে কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও কষ্ট পায়। (সহিহ মুসলিম)
বিড়ি-সিগারেটের দুর্গন্ধ পেঁয়াজ-রসুনের দুর্গন্ধের চেয়ে তীব্র হয়ে থাকে। তাই সিগারেট খেয়ে মসজিদে গিয়ে অন্যদের কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে না পারলে নামাজ পড়া বা মসজিদে যাওয়া ছেড়ে দেওয়া যবে না। সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করার পাশাপাশি মসজিদে ঢোকা বা নামায আদায়ের আগে ব্রাশ করে বা অন্য যে কোনো উপায়ে মুখ ও শরীরের দুর্গন্ধ দূর করে নিতে হবে।
সিগরেট হারাম হওয়ার কিছু কারণ
১। সিগারেট খাওয়া একটি অপচয় , আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম।
২। এতে দুর্গন্ধ আছে, সিগারেটের গন্ধ আশপাশের মানুষকে কষ্ট দেয়।
৩। এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি, আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম।
তাই কেউ কেউ মাকরুহ বললেও বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ নির্ভরযোগ্য আলেম সিগারেট খাওয়াকে নাজায়েজ বা হারাম বলেছেন। এ অভ্যাস কারো থাকলে যত দ্রুত সম্ভব ছেড়ে দিতে হবে।