কানের ভিতরে অতিরিক্ত বা ঘন ঘন ময়লা হওয়ার কারণ কী?

মানুষের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গের মতো কানের ভেতরেও ময়লা বা খইল জমে। এটি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। তা না হলে কানের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা কানের ময়লা বা খইল নিয়ে খুব একটা ভাবেন না।

আমাদের শরীরের ভেতরকার সমস্যা শরীরের বাইরে প্রভাব ফেলে। যেমন শরীরের ভেতরে কোনো রোগ হলে তার প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকে, সাধারণ কাজ কর্মে, ঘুম, খাওয়াসহ সবকিছুতে অর্থাৎ শারীরিক এবং মানসিকতায়।

কানের ভেতরে যে ময়লা জমে তা আমাদের শরীরের এক প্রকার উচ্ছিষ্ট। কানে ধূলাবালি ঢুকতে পারে কিন্তু তার পরিমাণ খুবই কম। কারণ কানের পশম কানের ভেতরে ধুলাবালির প্রবেশ রোধ করে। কিন্তু কানের একদম ভেতরে যে ময়লাগুলো জমে সেগুলো শরীর থেকেই আসে। এবং তা আমাদের শরীরের নানা ধরনের সমস্যা নির্দেশ করে।

সাধারণত কানের খইলের রঙ হয় হালকা কমলা থেকে গাঢ় বাদামি কিন্তু এই রঙ যদি পরিবর্তন হয়ে হলুদ, সবুজ, সাদা বা কালো হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে কানে কোনো সমস্যা রয়েছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

কানের ময়লা বাড়ার কারণ

বিশেষজ্ঞের মতে, এমন অনেক জিনিস আছে যা কানের স্বাভাবিক মোম নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন- ইয়ারফোন, শ্রবণযন্ত্র, ইয়ারবাডের ব্যবহার ইত্যাদি। জেনে নিন কীভাবে-

কটনবাড

কটনবাড দিয়ে কান পরিষ্কারের ক্ষেত্রে মোমগুলো ধাক্কা লেগে আরও ভেতরে চলে যায়। হার্লে স্ট্রিট ইএনটি ডাক্তারদের মতে, এমনকি কানের পর্দাও ফেটে যেতে পারে কটনবাড ব্যবহারের অভ্যাসে।

নিয়মিত কটনবাড ব্যবহারে মোমগুলো সব একত্র হয়ে শক্ত হয়ে যায়, ফলে শ্রবণশক্তি কমে যায়। এমনকি অত্যধিক শক্তি প্রয়োগের ফলে রক্তপাত ও ক্ষতের সৃষ্টি হয় কানে।

সাঁতার

সাঁতার কাটার কারণে ‘ওটিটিস এক্সটার্না’ নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটতে পারে কানে। ফলে প্রদাহ বা জ্বালার সৃষ্টি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া কানের পর্দা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

ফলে সাঁতারুদের কানে ইয়ারওয়াক্স তৈরি হতে পারে। এর চিকিৎসায় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে ও ব্যথা কমাতে কানের ড্রপের প্রয়োজন হয়।

ইয়ারফোন

বর্তমানে ইয়ারফোন ব্যবহার করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। হোক সেটি তারযুক্ত কিংবা ব্লুটুথ। অত্যধিক ব্যবহৃত এই প্রয়োজনীয় গ্যাজেট কিন্তু কানের জন্য খুবই ক্ষতিকর, এমনটিই মত ডা. ওয়াইল্ডের।

তার মতে, দীর্ঘসময় ইয়ারফোন ব্যবহারের কারণে স্বাভাবিক নিয়মে কান থেকে মোম নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায় ও ময়লা আবার কানে ফিরে যায়। ফলে কানে মোম আটকে যায় ও সংক্রমণ ঘটতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার বন্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের মতে, ইয়ারফোনগুলো কানের মোমকে সংকুচিত করে দেয়। ফলে শরীর স্বাভাবিকভাবে সেগুলো কান থেকে বের করে দিতে পারে না।

এমনকি ইয়ারফোন ব্যবহারে কানে আর্দ্রতা ও ঘামও আটকাতে পারে। এমনকি বাতাসের প্রবাহকেও প্রভাবিত করে, ফলে ইয়ারওয়াক্সগুলো শুকায় না সহজে।

একজিমা ও সোরিয়াসিস

ত্বকের অবস্থার কারণেও কিন্তু কানে ময়লা বেশি জমতে পারে। একজিমা ও সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের অবস্থাও এক্ষেত্রে দায়ী।

ডা. ওয়াইল্ডের মতে, মোমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে যদি এটি কানের ভেতরে তৈরি হয়। ন্যাশনাল একজিমা সোসাইটির মতে, দীর্ঘ সময় ধরে কান ভেজা থাকার কারণে সংক্রামিত কানের একজিমা হয়।

কানে শোনার যন্ত্র

আপনি যদি শ্রবণযন্ত্র পরেন, তাহলেও কানের মোম তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বেশি, ডা. ওয়াইল্ড বলেছেন। তার মতে, শ্রবণযন্ত্রগুলো কানের মধ্যে আর্দ্রতা বাড়ায় ও ঘাম গ্রন্থি (সেরমিনাস) দ্বারা কানের মোমের উৎপাদন বাড়াতে পারে। আবার সেগুলো সহজে শুকাতে পারে না ও স্বাভাবিক নিয়মে বেরও হতে পারে না।

​কান পরিষ্কারের ঘরোয়া পদ্ধতি

* অল্প উষ্ণ জলে অর্ধেক চামচ বেকিং সোডা গুলে নিন। সেই জলের এক ফোঁটা ড্রপারে করে কানের গর্তের কাছে ফেলে দিন। ঘাড় কাত করে ভিতরে দিকে অল্প করে জল প্রবেশ করতে দিন। এভাবে দিনের মধ্যে বিভিন্ন সময় চার পাঁচ বার করলে কানের শক্ত ময়লা নরম হয়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে। তবে এভাবে নিয়মিত করবেন না। মাসে একবার করলেই যথেষ্ট।

* হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দিয়ে কান পরিষ্কারের কথাও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। এক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ ফোঁটা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কানে ঢেলে ঘাড় কাত করতে হয়। কিছুক্ষণ হালকা করে মাথা ঝাঁকাতে হয়। ধীরে ধীরে কানের ময়লা নরম হয়ে যায়। এরকম দিনে একবার করলেই হয়।

* কানের শক্ত ময়লা নরম করতে পারেন তেল দিয়ে। বেবি অয়েল, নারকেল তেল, গ্লিসারিন কিংবা অলিভ অয়েল দিয়ে কান পরিষ্কার করা যায়। এক্ষেত্রে কানে দু ফোঁটা তেল দিয়ে ঘাড় কাত করে রাখুন। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখবেন কানের ময়লা বেরিয়ে আসছে।

* কান পরিষ্কার করতে মেডিকেটেড ইয়ারবাড ব্যবহার করুন। তবে ইয়ারবাড যেন কানের গভীরে ঢুকিয়ে দেবেন না।

* কাত হয়ে শুয়ে পড়ে, একটি পরিষ্কার সুতির কাপড় গরম জলে ভিজিয়ে আলতো করে কানের উপর রাখুন। তাপ কানের ভিতরে জমাট বেঁধে থাকা ময়লা নরম করতে সাহায্য করবে। ফলে তা নিজে থেকেই বেরিয়ে আসবে।

* ঘরোয়া উপায়ে কান পরিষ্কার করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল লবণ জল। এতে খুব সহজেই কানের ময়লা পরিষ্কার হবে। হালকা গরম জলের সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে কানে দিন। এরপর মাথা কাত করে কয়েক মিনিট রাখুন। সহজেই ময়লা নরম হবে।

এসিক্লোফেনাক খাওয়ার নিয়ম- Rules for taking Aceclofenac
ঘুমের হোমিও ঔষধের নাম - Name of sleep homeo medicine
মুখের ভেতরে ঘা হওয়ার কারণ ও সমাধান - Causes and solutions for mouth sores
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা হওয়ার কারন-Causes of back pain from gastric
হার্নিয়া: কারণ, চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়-Hernia: Causes, treatments, and diagnosis
গরমে শিশুর অসুখ হলে যা করবেন-What to do if the child is sick in summer
গরমে শিশুর যত্নে যা করবেন-What to do with baby care in summer
প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার-Urinary tract infection causes, symptoms and treatment
শিশুদের দাঁত ফাঁকা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার-Causes and remedies for tooth gap in children