একজিমা – কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা - Eczema – Causes, Symptoms and Treatment
Eczema Treatment

একজিমা কি? কারণ , লক্ষণ ও উপসর্গ , রোগ নির্ণয়-What is eczema? Causes, signs and symptoms, diagnosis

একজিমা (Eczema) বা এ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা বিখাউজ এমন একটি চর্মরোগ যা হলে ত্বক লাল বর্ণ ধারণ করে, চুলকায় আবার ফুস্কুড়িও হতে পারে। ত্বকের যেকোনো অংশেই একজিমা রোগ হতে পারে। তবে হাত, পা, বাহু, হাঁটুর বিপরীতে, গোড়ালী, হাতের কব্জি, ঘাড় কিংবা ঊর্ধ বক্ষস্থল ইত্যাদি অংশে বেশি হতে পারে।

প্রথমে শুরু হয় চুলকানো থেকে। তবে একজিমার কতগুলো বয়স রয়েছে। যেমন : চাইল্ডহুড একজিমা। বাচ্চাদের একজিমা। এটি আবার বয়স অনুযায়ী হয়। সাধারণত জন্মের পরে কয়েক মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত হয়। দুই বছরের পর থেকে ছয় বছর পর্যন্ত আরেক ধরনের। পরে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত আরেক ধরনের। একজিমার এই ভেদটা বড়দের একজিমা থেকে ভিন্নরকম। বাচ্চাদের একজিমা সাধারণত মুখে বেশি হয়। কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে মুখে একেবারে হয় না। বরং হাতে-পায়ে বেশি হয়। এ জন্য এর রকমভেদ রয়েছে বয়স অনুযায়ী।

একজিমার উপসর্গ হলো, চুলকানো। তারপর আস্তে আস্তে ওই জায়গা শুষ্ক হয়, খুশকির মতো কিছু বাড়তি চামড়া থাকে। এর ওপর চুলকাতে চুলকাতে একসময় দেখা যায়, কালো রং ধরছে। অথবা লাল রং ধরে যাচ্ছে। চামড়ার পুরুত্ব বাড়তে থাকে। উঁচু হতে থাকে। সহজেই এটি ভালো হতে চাচ্ছে না এমন।

একজিমা কি-What is eczema 

একজিমা এক প্রকাম চর্ম রোগ যা বাংলাদেশে পামা, বিখাউজ, কাউর ঘা ইত্যাদি স্থানীয় নামে পরিচিত। ‘মেডিকেলের ভাষায় একে এটপিক ডার্মাটাইটিস (Atopic Dermatitis) বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজিমার অন্যতম উৎস বংশগত বলে ধারণা করা হয়। এই রোগে ত্বকের বিশেষ কোন কোন স্থানে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। 

একজিমার প্রকারভেদ :

একজিমা অনেক ধরনের হয়ে থাকে, যেমন :

এটোপিক একজিমা- শরীরের যেসব স্থানে ভাঁজ পড়ে। যেমন- হাঁটুর পেছনে, কনুইয়ের সামনে, বুকে, মুখে এবং ঘাড়ে সেসব স্থান এটোপিক একজিমা দ্বারা আক্রান্ত হয়। অ্যালার্জিক কনট্যাক্ট একজিমা- কোনো পদার্থ বা বস্তু থেকে যখন একজিমা দেখা দেয় তখন শরীরের যে অংশে অ্যালার্জি হয় সেখানে লালচে দানা দেখা যায়। কিন্তু এটা শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে। ইরিট্যান্ট কনট্যাক্ট একজিমা- এটি অ্যালার্জিক একজিমার মতোই এবং সাধারণত ডিটারজেন্ট অথবা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত দ্রব্যের ঘনঘন ব্যবহারের মাধ্যমে এই একজিমা দেখা দেয়।

সেবোরিক একজিমা- মাথার ত্বকে হালকা খুশকির মতো তৈলাক্ত ফুসকুড়ি দেখা যায়। এর ফলে শরীরের অন্যান্য অংশ লালচে এবং যন্ত্রণার সৃষ্টি হতে পারে। এটি সাধারণত এক বছরের নিচের শিশুদের দেখা যায়। ম্যালাসেজিয়া ইষ্ট দ্বারা সংক্রমণের মাধ্যমে সেবোরিক একজিমা দেখা দেয়।

ডিসকয়েড একজিমা- প্রাপ্ত বয়স্ক যে কারোরই এই একজিমা হতে পারে। সাধারণত বয়স্ক লোকদেরই এটি বেশি হতে দেখা যায়। শুষ্ক ত্বক সংক্রমণের মাধ্যমে এটি হয়ে থাকে। এতে শরীরের যে কোনো অংশে বিশেষ করে পায়ের নিচের অংশে গোলাকৃতি লাল, শুষ্ক এবং চুলকানির মতো হয়ে থাকে।

একজিমা রোগের কারণ

একজিমার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ত্বকের আর্দ্রতা ত্বককে ব্যাকটেরিয়া এবং যে সকল পদার্থ অ্যালার্জির সৃষ্টি করে তা থেকে রক্ষা করে। সাধারনত নিম্নলিখিত কারন সমুহকে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী করা হয় :

১. সাধারনত শুষ্ক বা রুক্ষ ত্বক একজিমার জন্য দায়ী কারন- এ ধরনের ত্বক ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে না।

২. বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, সাবান বা শ্যাম্পু থেকে এ রোগের সংক্রমণ হতে পারে।

৩. এলার্জি হয় এমন বস্তু যেমন- পরাগ রেণু, ধুলা, পশম, উল ইত্যাদি থেকে এটির সংক্রমন হতে পারে।

৪. জিনঘটিত যেকোনো পরিবর্তনের ফলে ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে এটির সংক্রমন হতে পারে।

৫. দীর্ঘমেয়াদী কোন রোগের কারনে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেলে বিখাউজ হতে পারে।

৬. বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার কারনে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে এটির সৃষ্টি হতে পারে।

৭. পরিবেশগত কারণেও একজিমা হতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা কিংবা স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়া ইত্যাদি।

৮. আবার হরমোনঘটিত কোন পরিবর্তন, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় কিংবা গর্ভাবস্থায় এটি হতে পারে।

একজিমার উপসর্গ কি কি?

* একজিমার প্রথম এবং প্রধান উপসর্গ হল ত্বকের যেকোনো অংশে চুলকানি।

* চুলকানির কারণে, ত্বক থেকে একটি ক্রাস্ট এবং ফোস্কা/পিম্পল বের হয়।

* মাঝে মাঝে জ্বালাও হতে থাকে।

* যদি চুলকানি বন্ধ না হয়, তবে ত্বকে আলাদা প্যাচ তৈরি হয়, যা দেখে মনে হয় এটি উপরে থেকে ঠিক করা হয়েছে।

* চুলকানির কারণে মোটেও স্বস্তি নেই, সব সময় সব মনোযোগ ত্বকের একই অংশে থাকে।

* এই চুলকানি ব্যক্তিকে মানসিকভাবেও প্রভাবিত করে এবং ব্যক্তি বিষণ্নতায় চলে যায়।

কারা ঝুঁকিতে আছেন?

১. পরিবারের কোনো সদস্যের একজিমা বা বিখাউজ থাকলে অন্যান্য সদস্যদেরও হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

২. ত্বক শুষ্ক বা রুক্ষ হলে এ রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা বেশি কারন- এ ধরনের ত্বক ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে না।

৩. বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পুর ব্যবহারের ফলেও এ রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৪. এলার্জি হতে পারে এমন বস্তু যেমন- পরাগ রেণু, ধুলা, পশম, উল ইত্যাদির সংস্পর্শে একজিমার সংক্রমন হতে পারে।

৫. জিনঘটিত কোনো পরিবর্তনের ফলে ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে একজিমার সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৬. চর্মরোগে আক্রান্ত কোন রোগীর সেবাকাজে নিয়োজিত ব্যক্তির এ রোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

৭. শহরাঞ্চালে বসবাসকারী শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকে বিশেষ করে ডে-কেয়ার বা চাইল্ড কেয়ারে থাকা শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।

৮. অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়ার ফলে, অর্থাৎ পরিবেশগত কারণেও একজিমা হতে পারে।

৯. হরমোনঘটিত কোন পরিবর্তন, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় কিংবা গর্ভাবস্থায় একজিমা হতে পারে।

১০. দীর্ঘমেয়াদী কোন রোগের কারনে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে একজিমার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে এটি হতে পারে।

একজিমা নির্ণয়ের পদ্ধতি কি? – একজিমা রোগ নির্ণয়

একজিমা নির্ণয়ের জন্য একটি বিশদ পরীক্ষার প্রয়োজন। ডাক্তাররা প্রায়ই নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে একজিমা নির্ণয় করেন।

রক্ত ​​পরীক্ষা

সাধারণত এই রক্ত ​​পরীক্ষায় রক্তে ইওসিনোফিলের মাত্রা এবং আইজিই অ্যান্টি-বডি পরীক্ষা করা হয়। যাদের একজিমা আছে তাদের ক্ষেত্রে ইওসিনোফিল এবং আইজিই সাধারণত বেশি থাকে।

ত্বকের বায়োপসি

এই পদ্ধতির মধ্যে, ডাক্তার ত্বক অবস করে কেটে নেয় এবং পরিক্ষা করে একজিমা নির্ণয় করে।

বুকাল সোয়াব

এই পদ্ধতিতে, একটি তুলো প্রয়োগকারীর সাহায্যে গালের ভিতরের অংশটি পরিক্ষা করে কোষগুলোর ডিএনএ উপাদানের উৎস নেয়। ডিএনএর ফিলাগ্রিন জিনে মিউটেশন দেখা গেলে একজিমা আছে বলে ধারণা করা হয়।

একজিমার বিভিন্ন চিকিৎসা

* একজিমার চিকিৎসায় চারটি প্রধান বিষয়ের যত্ন নেওয়া হয় – চুলকানি নিয়ন্ত্রণ করা, ত্বক নিরাময় করা, জ্বলন প্রতিরোধ করা এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা।

* হাইড্রোকর্টিসোন স্টেরয়েড ক্রিম প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি চুলকানি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

* এনএসএআইডি মলম হল একটি প্রদাহবিরোধী ওষুধ যা কম গুরুতর একজিমার জন্য উপযুক্ত। এটি প্রদাহ কমায়।

* ইউভি লাইট এবং পিউভিএ থেরাপিও একজিমায় উপকারী।

একজিমা দূর করার ঘরোয়া উপায়

১। নারিকেল তেল- নারিকেল তেলকে শুধু অলৌকিক তেল বলা হয় না, এর এমন অনেক গুণ রয়েছে যা আমাদের ত্বকে একটি স্তর তৈরি করে বাহ্যিক জিনিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এতে রয়েছে প্রদাহরোধী এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা একজিমা থেকে মুক্তি পেতে উপকারী।

ব্যবহার- প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে নারিকেল তেল লাগান। এটি একজিমার চিকিৎসায় ভালো কাজ করে।

২। মধু ব্যবহার করে- মধু যে কোন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং প্রাকৃতিকভাবে ক্ষত সারাতে উপকারী।

ব্যবহার- দুই চামচ মধুতে সমপরিমাণ দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান এবং শুকিয়ে যাওয়ার পর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দারুচিনির গুঁড়োতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একজিমার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

৩। এলোভেরা- এলোভেরার ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। এইভাবে, এটি ত্বককে আর্দ্র রেখে ত্বককে শীতলতা প্রদান করে এবং চুলকানি প্রতিরোধ করে।

ব্যবহার- এলোভেরা গাছের একটি পাতা কেটে নিন এবং একটি ছুরি দিয়ে কেটে জেলটি সরিয়ে ফেলুন। এই জেলটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। প্রয়োজনে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৪। হলুদহলুদ একজিমার চিকিৎসায় উপকারী। এর অ্যান্টি-সেপটিক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য চুলকানি এবং ফোসকা, পিম্পলে উপশম দেয় এবং প্রদাহ দূর করে।

ব্যবহার- পানির সাথে হলুদ মিশিয়ে তাতে গোলাপ জল যোগ করুন। একজিমার জায়গায় লাগান এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকানোর পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ত্বক শুকিয়ে নিন।

৫। তুলসীতুলসীর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টি ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকের জ্বালা কমায় এবং ব্রণ ইত্যাদি নিরাময় করে।

ব্যবহার- কিছু তুলসী পাতা নিয়ে এর রস বের করে নিন। রস বের করার জন্য আপনি একটি পাতলা সুতির কাপড় বা মসলিন ব্যবহার করতে পারেন। এবার এই রসটি একজিমার এলাকায় লাগান এবং শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন। শুকানোর পর,সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এছাড়া তুলসি চা পান করলেও একজিমা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কিভাবে একজিমা প্রতিরোধ করা যেতে পারে?

একজিমা প্রতিরোধ করার জন্য, আপনাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির যত্ন নিতে হবে।

১. যেসব বস্তু বিখাউজ বা একজিমার সমস্যা বাড়িয়ে তোলে বা যেসব খাবার খেলে এটি বাড়ে তা পরিহার করতে হবে।

২. সবসময় নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। সিনথেটিক বা উলের পোশাকে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে তা পরা যাবে না।

৩. কাপড় পরিষ্কারের জন্য কৃত্রিম রঙ ও সুগন্ধিবিহীন সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হবে।

৪. ধূলাবালি, ফুলের রেণু এবং সিগারেটের ধোঁয়া অর্থাৎ যেগুলো থেকে অ্যালার্জি হতে পারে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।

৫. আক্রান্ত স্থান চুলকানো যাবে না।

৬. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

৭. ত্বক শুষ্ক না রেখে, প্রয়োজনে কৃত্রিম রঙ ও সুগন্ধিবিহীন লোশন বা ক্রিম ব্যাবহার করতে হবে।

একজিমা রোগের জন্য ডায়েট

আপনার খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনলে আপনি একজিমা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যেমন,

১. আমরা খাবারের মাধ্যমে যেটাই গ্রহণ করি, তার প্রতিফলন ত্বকের বাইরের সারফেসে দেখতে পাই। অতিরিক্ত তেল, চর্বি যুক্ত খাবার খেলে মুখে যেমন ব্রন হয় ঠিক তেমনি একজিমা হলেও খাবারে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। এমন খাবার খেতে হবে যেটা আপনার লিভার ফাংশন ভালো রাখে।

২. প্রতিদিন খাবারের তালিকায় প্রচুর পরিমাণে সবজি রাখতে হবে। আজকাল বাজারে ফরমালিন এবং কীটনাশক স্প্রে দেওয়া শাক সবজিতে ভরে গিয়েছে। যেভাবেই হোক, এই ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে।

৩. গরুর মাংস পুরোপুরি ভাবে পরিহার করতেই হবে। যদি খেতেই হয় সবুজ ঘাস খাওয়া এমন গরুর মাংস খাওয়া যেতে পারে, তাও অল্প পরিমাণে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে এমন খাবার যেমন রুই মাছ, বাদাম ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।

৪. যদি সম্ভব হয় কার্বোহাইড্রেট খাবার একদমই কম খাবেন।

৫. গরুর দুধ একজিমা রোধে অন্যতম সহায়ক। সেটা খেয়ে নয় বরং না খেয়ে। পরীক্ষামূলক ভাবে ২ সপ্তাহ গরুর দুধ না খেয়ে দেখতে পারেন। পজিটিভ ফলাফল আপনিই দেখতে পারবেন। কেননা গরুর দুধ অনেক এসিডিক, যেটা নেগেটিভ ফলাফল দেয় ইমিউন সিস্টেম এবং একজিমার জন্য। যেকোনো দুধ জাতীয় খাবার পরিহার করুন। যেমন কেক, পায়েস ইত্যাদি।

গরুর দুধের পরিবর্তে মহিষের, পাঠা অথা ভেড়ার দুধ খেতে পারেন। তাছাড়া বাদাম, সয়া দুধ, রাইস দুধ গরুর দুধের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।

৬. কিছু সাপ্লিমেন্ট একজিমা প্রতিরোধে সহায়ক। তাই প্রতিদিন নিয়ম মাফিক কিছু সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি প্রতিরোধে সহায়ক। একজিমা প্রতিরোধে ওমেগা ৩,৬,৯ অনেক ভালো কাজ করবে। ভিটামিন এ, ডি, ই ত্বকের কোলাজেন সুরক্ষায় অনেক কার্যকর। এরা ত্বকের সারফেসকে ব্যালেন্সড রাখে।

৭. একজিমা প্রতিরোধে Gamma-linolenic acid (GLA) ফ্যাটি অ্যাসিড অনেক কার্যকর। তাই ফ্যাটি অ্যাসিড নির্বাচনের সময় এই উপাদানটি আছে কিনা সেটি দেখতে হবে।

একজিমা চলাকালীন আপনার জীবনধারা

* ত্বককে সবসময় আর্দ্র রাখার চেষ্টা করুন। ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকলে চুলকানি হবে না এবং একজিমা বাড়বে না।

* আপনার নখ সবসময় ছাঁটা রাখুন, যাতে আপনি চাইলেও আপনার ত্বকে চুলকানি না করেন।

* বেশি করে পানি পান করা একজিমার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে কারণ একজিমার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ত্বকের সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা প্রয়োজন।

* দুধ, ডিম, সয়া, গ্লুটেন, বাদাম, ঝিনুক, মসুর ডাল, কালো চা, মটরশুটি, নাশপাতি, সবুজ আপেল এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলো একজিমাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

* সূর্যের আলো আমাদের ত্বকের জন্য ভালো কারণ ত্বকে ভিটামিন ডি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং এটি ত্বকের বাইরের স্তর, এপিডার্মিস মেরামত করে।

একজিমা সমস্যায় কিছু ঘরোয়া প্রতিকার এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। তবে বেশি গুরুতর অবস্থার ক্ষেত্রে, একজিমার জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভাল।

চিকিৎসা

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন অথবা ব্যবহার করতে হবে। যেমন_ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন, স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার, হরমোন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। একজিমা জটিল আকার ধারণ করলে সুস্থ হতে সময় লাগে, এজন্য অস্থির না হয়ে ধৈর্য সহকারে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। 

লোশন, তেল যেগুলো একজিমা আক্রান্ত ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়-১. CeraVE,২. Cetaphill,৩. Bio oil

তাছাড়া যেকোনো ব্র্যান্ডের অর্গান অয়েল যেটা ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ, সেটা ব্যবহার করতে পারবেন। ত্বকে একজিমার প্রকোপ অনেকাংশে কমে আসবে। একজিমা হলে একটা জিনিসই মনে রাখতে হবে। ত্বককে কখনই শুষ্ক হতে দেওয়া যাবে না। দিনে যতটা সম্ভব ত্বকে অয়েল যুক্ত ময়েশ্চারাইজার দিতে হবে।

ডাম্পিং সিন্ড্রোম: লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা - Dumping Syndrome: Symptoms, Causes and Treatment
হার্নিয়া: কারণ, চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়-Hernia: Causes, treatments, and diagnosis
গর্ভাবস্থায় যেসব ওষুধ খাওয়া যাবে না - Medicines that cannot be taken during pregnancy
ফলিসন কখন? কেন? কিভাবে খাবেন?-folison tablet benefits
ইকোস্প্রিন কখন? কেন? কিভাবে খাবেন? - When is Ecosprin? Why? How to eat?
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর নাম - Name of calcium tablets
এলার্জি ঔষধ এর নাম এবং দাম - Allergy medicine names and prices