
ডিবির হাওর-Dibir Haor
সিলেটের উত্তর পূর্বে অবস্থান জৈন্তাপুর উপজেলা। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুরে মেঘালয়ের পাদদেশে ঝর্ণা বেষ্টিত ডিবির হাওর। যা “লাল শাপলার” বিল নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল। বিলগুলোর প্রায় ৯০০ একর ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলার জন্ম।
আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার বিল ডিবির হাওর। প্রতিদিন ভোরে এখানে ফুটে ওঠে অপূর্ব অগণিত ফুল, তাদের সাথে দেখা করতে প্রতিদিন ভোর হওয়ায় সাথে সাথেই দলবেধে নৌকায় ভেসে বেড়ান অগণিত ভ্রমণপিয়াসু। সাথে বাড়তি আকর্ষণ হলো হাওরের পারেই পাহাড়ের সারি। ভারতের মেঘালয়ের সেই পাহাড় যেন মনে হয় আরেক স্বর্গ। যেহেতু শীতকাল তাই নানা ধরণের পাখির দেখাও পাবেন আপনি এখানে। প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। ভোরের লাল শাপলা, পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যে, সাথে পাখির কিচির মিচির- এ যেন আসলেই এক প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য।
অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে ইতিহাসও। স্বাধীন জৈন্তারাজ্যের রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য ছিল জৈন্তাপুর। শ্রীহট্ট তথা ভারতবর্ষের অধিকাংশ এলাকা তখন মোঘলসাম্রাজ্যের। তখনও জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। প্রায় ৩৫ বছর স্বাধীন রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হয়। রামায়নেও জৈন্তিয়া রাজ্যের অনেক উল্লেখ আছে।
১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারি নামক ইংরেজ রাজেন্দ্র সিংহকে কৌশলে বন্দি করে সব লুট করে নেয় রাজা বিজয় সিংহের রাজ্য থেকে। এই রাজ্যেরই স্মৃতি বিজড়িত ডিবির হাওর। পরে সেখানেই তার সমাধিস্থল হয়ে ওঠে। তাছাড়া এখানে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন এক মন্দির। ইতিহাস থেকে জানা যায় জৈন্তার এক রাজাকে এখানে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্মৃতিতেই এই মন্দির তৈরী হয়।
অতিথি পাখি
প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। যার মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস ,পাতিসরালি, পানকৌড়ি, সাদাবক ও জল ময়ুরী।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা, চট্টগ্রাম দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকেই যদি ঘুরে আসতে চান সিলেটের লাল শাপলার ডিবির হাওরে। তাহলে প্রথমেই আপনাকে বাস কিংবা ট্রেনে সিলেটে পৌঁছাতে হবে।
খুব সকাল পৌঁছানোর পর আপনাকে শাপলার মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে তখনই রওনা করতে হবে। কেননা রোদ ওঠার সাথে সাথে শাপলার আসল সৌন্দর্য্য লোপ পেতে থাকে।
সিলেট শহরে পৌঁছে আপনি শহরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ থেকে, উত্তর সুরমার সোবহানীঘাট কিংবা টিলাগড় পয়েন্ট থেকেও জাফলংগামী বাস পাবেন। বাসটি জৈন্তাপুর বাজার হয়ে যাবে। আপনাকে সেখানেই নামতে হবে। লোকাল বাস ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা নিবে।
তবে এই বাসে করেই আপনি বিজিবি ক্যাম্প লিখা নামক জায়গায় নামতে পারেন। রাস্তার বিজিবি ক্যাম্প লিখা সাইনবোর্ডের ডান পাশের রাস্তা দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন লাল শাপলার বিল।
তবে খুব সকালে যেহেতু আপনি যাচ্ছেন, পথে খাবারের প্রয়োজন হলে আপনাকে জৈন্তা বাজারে নামতে হবে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আপনাকে বাজারে থাকা টমটমযোগে চলে যেতে হবে ডিবির হাওরে। টমটম রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকা। তবে সিলেট থেকে চাইলে সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে।
কোথায় থাকবেন
তামাবিল জৈন্তাপুর রোডে বেশ কিছু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, চাইলে সেইসব রিসোর্টে থাকতে পারবেন অথবা থাকার জন্য সিলেটে ফিরে আসতে পারেন। সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল পাওয়া যায়। হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী থাকতে পারবেন। এছাড়া শহরের লালবাজার এলাকায় বেশ কিছু মানসম্মত রেস্ট হাউজ আছে। এগুলোতে ৪০০ থেকে ৩০০০ টাকায় সহজেই রাত্রি যাপন করতে পারবেন।