মালনীছড়া চা বাগান-Malnichhara tea garden
Malnichhara tea garden

মালনীছড়া চা বাগান-Malnichhara tea garden

মালনীছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত একটি চা বাগান। এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন চা বাগান। মালনীছড়া চা বাগান বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। ১৮৪৯ সালে লর্ড হার্ডসন ১৫০০ একর জায়গার উপর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই চা বাগানটি সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত।

ইতিহাস

১৬৫০ সালে চীনে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। দেশটির বুদ্ধিজীবীদের প্রতিদিনকার জীবনের ৭টি কাজের একটি ছিল চা পান। তার প্রায় ২০০ বছর পরে ১৮৫৪ সালে পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের সিলেটেই প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। চায়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ব্রিটিশ আর বাংলাদেশিরা। সিলেটের মালনীছড়া চা বাগান থেকেই উপমহাদেশে চা চাষের গোড়াপত্তন। এরপর দেড় শতাব্দীর মালনীছড়া বহু ইংরেজ, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি ব্যবস্থাপকের হাত ঘুরে ১৯৮৮ সাল থেকে এখনও ব্যক্তিগত মালিকানায় রয়েছে। শ্রীমঙ্গলকে চায়ের দেশ বলা হলেও সিলেটের এই চা বাগান থেকেই চা চাষের গোড়াপত্তন। যা এখন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে টমাস প্লেন থেকে নেমে বাগানের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে বলেছিলেন, পৃথিবী এতো সুন্দর যে মালনীছড়া বাগান না দেখলে তা বোঝা যাবে না। শুধু হ্যারি কে টমাস নয়, সিলেটের চা বাগানের সবুজ মায়ায় প্রতিদিন জড়ো হন হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক।

লাক্কাতুরা চা বাগান

মালনীছড়া আর লাক্কাতুরা চা বাগান পাওয়া যাবে একই যাত্রা পথে। ব্যবধান শুধু রাস্তার এপাশ ওপাশ। শ্রেষ্টত্বের দিক থেকে লাক্কাতুরা চা বাগানটি কখনো কখনো মালনীছড়া চা বাগানকে ছাড়িয়ে গেছে। নগরীর চৌকিদেখি আবাসিক এলাকা পেরুনোর পর গলফ ক্লাবের রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই একবারেই চলে যাবেন বাগানের মধ্যিখানে। বাগানের এপাশ ওপাশ ঘুরে গল্ফ ক্লাবের সুন্দরম টিলার উপরও হতে পারে আপনার আনন্দ আয়োজন। গল্ফ ক্লাব মাঠ পেরিয়ে আরো একটু সামনে এগুলেই পেয়ে যাবেন সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম। চারপাশে চা বাগান আর মাঝখানে স্টেডিয়াম, সত্যিই অসাধারণ! এমন সবুজ প্রকৃতির ভেতর স্টেডিয়াম পৃথিবীতে সম্ভবত একটাই। আরো বছর খানেক পর এখানেই বসবে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের জমকালো আসর।

তারাপুর চা বাগান

তারাপুর চা বাগানও সিলেট শহরের একেবারেই অদূরে। নগরীর আম্বরখানা থেকে মদিনা মার্কেট যাওয়ার পথে পাঠানটুলা এলাকায় প্রকৃতির ছায়াঘেরা পরিবেশে তারাপুর চা বাগান। একবারেই লাগোয়াভাবে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় মদন মোহন কলেজের ব্যবসায় শাখার ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারাপুর চা বাগান পর্যটকদের মাঝে আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় সবসময়ই পর্যটকদের পদচারনায় মূখর থাকে এ বাগানটি।

দলদলি চা বাগান

নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকা থেকে এমসি কলেজের দিকে একটু অগ্রসর হলেই হাতের বাম পাশে উপজেলা খেলার মাঠ। এর পাশ দিয়েই ভেতরে যাওয়া রাস্তায় সামান্য গেলেই পেয়ে যাচ্ছেন দলদলি চা বাগান। মূল বাগানে যেতে হলে পার হতে হবে বেশ কিছু লোকালয়। লোকালয় থেকে ভেতরে যেতে হয় বিশাল বিশাল টিলা বেষ্টিত মেঠো পথ ধরে। তারপর মূল চা বাগান। ভেতরে যাওয়ার রাস্তাটি গাড়ীর জন্য বেশ সুবিধাজনক নয়, সে জন্য মোটর বাইক কিংবা নিজে পা হতে পারে আপনার সুবিধাজনক বাহন।

একের ভেতর তিন

শহরতলীর শাহপরাণ মাজার গেট থেকে তামাবিল রোডে সামান্য গেলেই হাতের বাম পাশ দিয়ে ভেতরে গেছে খাদিম জাতীয় উদ্যানের রাস্তা। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে ভেতরে উদ্যান (খাদিম রেইন ফরেস্ট)। কিন্তু চা বাগানের জন্য এতোদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তামাবিল রোড থেকে একটু ভেতরে গেলেই একে একে পাওয়া যাবে বড়জান চা বাগান, গুলনি চা বাগান এবং খাদিম চা বাগান। বাগানের লাগোয়া পথে যেতে যেতে দেখা সবুজ দৃশ্যপট, শিল্পিত লোকালয় পর্যটকদের নজর কাড়ে সহজেই। রাস্তার পাশেই চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরি হওয়ায় নাকে লাগে সতেজ চায়ের মধুমাখা ঘ্রাণ। এছাড়া হাবিব নগর চা বাগান, আহমদ টি এস্টেট এবং খান চা বাগানের অবস্থান সিলেট-তামাবিল সড়কের হরিপুর এলাকায়।

লালাখাল টি এস্টেট

সিলেট-তামাবিল সড়কের সারিঘাট এলাকায় গিয়ে নৌকা করে যেতে হয় লালাখাল টি স্টেট। ঘন্টা খানেকের পথ। চা বাগানের সকল সৌন্দর্য ছাড়িয়ে গেছে সবুজ জলের আস্তরনে ছেয়ে যাওয়া নদীপথ। আসলেই অসাধারণ…! দু’পাশের সবুজ প্রকৃতির ছায়া যেন আছড়ে পড়েছে স্রোতস্বীনির বুকে।

শ্রীপুর 

জাফলং…! সবুজের সাথে সবুজের কি অপরূপ মেলবন্ধন! পর্যটন স্পট জাফলংয়ের কথা কে না জানে? প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারনায় প্রতিনিয়ত মূখর থাকে পর্যটন স্পট জাফলং। জাফলংয়ের সৌন্দর্যের মাঝে অন্য এক ভালোলাগার আবেশ সৃষ্টি করেছে শ্রীপুর চা বাগান। আপনার আগামীর জন্য এখানেও ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারেন কিছুটা সময়। সিলেট, যেন সবুজ প্রকৃতির অভয়াশ্রম! আর সবসময় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষের জন্য সেরা সময় এখনই। যখন প্রকৃতির সব বিচিত্র সৌন্দর্য মিশে আছে চা গাছের সবুজ পাতায়।

কিভাবে যাবেন?

সিলেট শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজেই রিকশা, অটোরিক্সা কিংবা সিএনজি ভাড়া করে মালনীছড়া চা বাগানে যেতে পারবেন। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজিতে চড়ে যেতে ১০ মিনিট এবং রিকশায় ২৫ মিনিট সময় লাগে।

ঢাকা থেকে সিলেট এর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে৷বাস গুলো সকাল থেকে রাত ১২.৪৫ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেড়ে যায়৷ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে।

ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার ১শ’ টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।

কোথায় খাবেন?

মালনীছড়া চা বাগান এলাকায় খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে জিন্দাবাজার এলাকায় বেশকিছু জনপ্রিয় রেস্তোরা রয়েছে। যার মধ্যে পানশী, পাঁচভাই, ভোজনবাড়ি, প্রীতিরাজ, স্পাইসি এবং রয়েলশেফ রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সিলেটে তুমুল জনপ্রিয় সাতকরা (হাতকরা) এবং আথনী পোলাও খেয়ে দেখতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

সিলেট শহরে থাকার আবাসিক হোটেল:

১।হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (বন্দর, শিশুপার্কের কাছে): ০১৭৩১৫৩৩৭৩৩, +৮৮০৮২১২৮৩৩৪০৪

২। হোটেল নির্ভানা ইন (রামের দিঘির পাড়, মির্জা জাঙ্গাল, সিলেট): +৮৮০৮২১২৮৩০৫৭৬, ০১৭৩০০৮৩৭৯০, ০১৯১১৭২০২১৩, ০১৭১১৩৩৬৭৬১

৩। হোটেল স্টার প্যাসিফিক (ইস্ট দরগাহ গেইট): ০১৭১৩৬৭৪০০৯, ০১৯৩৭৭৭৬৬৩৩, ০৮২১-২৮৩৩০৯১

৪। হোটেল অনুরাগ (ধোপা দীঘি নর্থ): ৭১৫৭১৭, ৭১৪৪৮৯, ০১৭১২০৯৩০৩৯

৫। সুরমা ভ্যালি গেস্ট হাউস (জেলা প্রশাসক/পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে): ০১৭১৬০৯৫৮৩৬

৬। হোটেল উর্মি: হযরত শাহজালাল (র: ) মাজার শরীফ পূর্ব দরগাহ্ হেইট, সিলেট, ফোন: ০৮২১-৭১৪৫৬৩, ০১৭৩৩১৫৩৮০৫

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

পূর্বদিকে ঢুকে পড়লে দেখা যাবে হারং হুরং গুহা। মালনীছড়া প্রধান বাংলোর পাশের রাস্তা দিয়ে অন্তত তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে গেলেই গুহার দেখা পাওয়া যায়।

মালনীছড়া ছাড়াও এখানে রয়েছে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার টি এস্টেট এবং পশ্চিম দিকে ভেতরে তারাপুর চা বাগান।

পূর্বদিকে কালাগুল চা বাগান, আরও পূর্বে চিকনাগুল চা বাগান।

স্বাধীনতা কমপ্লেক্স-Shadhinata Complex
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য-Dudhpukuria-Dhopachhari Wildlife Sanctuary
মুরারিচাঁদ কলেজ-Murarichand College
ঢাকা থেকে রাজশাহী ট্রেনের সময়সূচী -Dhaka To Rajshahi Train Schedule
সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Silk City Express train ২০২৪
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান - Bhawal National Park
দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Dolanchampa Express Train ২০২৪
চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Chitra Express train ২০২৪
বাংলাদেশের হাওরের তালিকা - List of Haors of Bangladesh
মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী-Mahanagar Express train schedule